আমাকে গুলি করুন। আমি আর বাঁচতে চাই না। আমার তো সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। আমার হার্টের ওষুধের টাকা জোগাড় করার সামর্থ্যও নেই।’ চট্টগ্রামে পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা বোরহান উদ্দিন নামের এক বিনিয়োগকারী কথাগুলো বলে অঝোরে কাঁদতে থাকেন।
আজ মঙ্গলবার নগরের আগ্রাবাদ এলাকার একটি ব্রোকারেজ হাউসে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। বোরহান দুই বছর আগে বন্দরের চাকরি থেকে অবসর নিয়ে শেয়ার ব্যবসায় নেমেছেন। ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে এখন তাঁর মূলধন নেমে এসেছে প্রায় শূন্যের কোঠায়। হতাশার সুরে তিনি বলেন, ‘জানি না শেষ পর্যন্ত আমার দাফনের টাকা জোগাড় করতে পরিবারকে হাত পাততে হয় কি না।’
পুঁজি হারিয়ে বোরহানের মতো অনেক বিনিয়োগকারী এভাবেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। তরুণ বিনিয়োগকারী আবদুল্লাহ হোসেন বলেন, ‘শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে আমি কী পাপ করেছি। বাবার পেনশনের টাকা দিয়ে এ ব্যবসায় নেমেছি। মাঝখানে কিছুটা আশায় বুক বেঁধেছিলাম। কিন্তু ঈদের পর থেকে প্রতিদিনই দরপতনে আর আমার ভাগ্যের পতন হতে থাকে।’
আজ নগরের বেশির ভাগ ব্রোকারেজ হাউসে ছিল হাতে গোনা কয়েকজন বিনিয়োগকারী। বহদ্দারহাট এলাকার একটি ব্রোকারেজ হাউসে নীরবে বসেছিলেন জালাল উদ্দিন নামের এক বিনিয়োগকারী। কথা বলতে রাজি হচ্ছিলেন না। অনেক অনুরোধের পর শুধু বললেন, ‘আমি শেষ হয়ে গেছি। আর কিছু বলার নেই।’
ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তা মো. ইউসুফ নবী বলেন, ‘আমাদের হাউসে যেখানে প্রতিদিন পাঁচ কোটি টাকা লেনদেন হতো, এখন তা ৪০-৫০ হাজারে নেমে এসেছে।’
দরপতনের প্রতিবাদে আজ দুপুরে নগরের আগ্রাবাদে বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের আয়োজন করেন। তবে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়নি।
ডবলমুরিং থানার পেট্রোল ইন্সপেক্টর মুন্সি হাফিজুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘তারা (বিনিয়োগকারীরা) সুষ্ঠুভাবে সমাবেশ ও মিছিল করেছে।’
ইনভেস্টরস ফোরাম অব চিটাগাংয়ের ব্যানারে সমাবেশে বক্তব্য দেন সংগঠনের আহ্বায়ক আসলাম মোরশেদ, যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ কাদের, সরোজ চৌধুরী প্রমুখ। এতে বক্তারা কাল বুধবার ও পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় আগ্রাবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেন। পরে তাঁরা মিছিল নিয়ে আগ্রাবাদ বাদামতলী পর্যন্ত সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। এ সময়ে তাঁরা অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
আসলাম মোরশেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আমরা এখন নিঃস্ব। তাই পথে নামতে বাধ্য হয়েছি।’
0 comments:
Post a Comment