বড় ভাইয়ের স্নেহ নিয়ে অনুজ আইভীকে বলেছিলেন ভাই শামীম ওসমান, বোন আয় একসঙ্গে কাজ করি। লাজুক হাসি দিলেও কোনো কথা বলেননি আইভী। এ নিয়ে শামীম ওসমানের মন খারাপ হয়নি। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ভোটের লড়াই যখন তুঙ্গে, নির্বাচন দোরগোড়ায় তখনই বাড়ি বাড়ি ঘুরে উঠান বৈঠকে শালীনতার নেকাব খুলে অগ্রজ শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে চলেছেন বিদ্রোহী প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভী। এতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শামীম ওসমান বুকে বেদনা অনুভব করলেও কোনো জবাব দিতে নারাজ। বলেছেন, মায়ের দোয়া নিয়ে নামাজ পড়েই নামেন ভোট চাইতে। গিবতকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না_ হাদিসের এ মর্মবাণীতে বিশ্বাসী তিনি। তাই কর্মীদেরও বলেছেন কারও নিন্দা নয়, বিনয়ের সঙ্গে যেন তার হয়ে ভোট চাওয়া হয়। শামীম সবাইকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবলেও আইভী বলছেন তিনি জিতবেন। কারও সঙ্গে লড়াই-ই হবে না। শামীমের বিনয়ী আচরণ, অক্লান্ত পরিশ্রম, মুরবি্বদের কদমবুসি করে শিশুর মতো ভোটের আবদার মানুষের মনকে নাড়া দিচ্ছে। অন্যদিকে সেলিনা হায়াত আইভীর আত্ম-অহঙ্কার ভোটাররা ভালো চোখে দেখছেন না। বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করছে।
এদিকে প্রচারণা ও গণসংযোগে মরণপণ লড়াইয়ে নেমেছেন এনসিসি প্রতিদ্বন্দ্বী তিন মেয়র প্রার্থী শামীম ওসমান, তৈমূর আলম খন্দকার ও ডা. সেলিনা হায়াত আইভী। আর যেন সময় নেই তাদের হাতে। নির্বাচনের আর মাত্র ৭ দিন বাকি। এরই মধ্যে ভোটারদের মন জয় করতে হবে তাদের। তাই এ ক্ষেত্রে প্রার্থীদের কেউ কেউ বেছে নিয়েছেন নানা কৌশল। কেউ কারও বিরুদ্ধে বিষোদ্গার, কেউ ভোট প্রার্থনায় অত্যন্ত বিনয়ী, আবার কেউ বর্তমান সরকারের বিভিন্ন সেক্টরের ব্যর্থতার সমালোচনাসহ জয় নিশ্চিত করতে মরণপণ লড়াইয়ের দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করছেন। অন্যদিকে ভোটাররাও প্রার্থীদের ভোট প্রার্থনার কৌশল পর্যবেক্ষণ করছেন নিবিড়ভাবে। ইতোমধ্যে সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ২৭টি ওয়ার্ডেই চষে বেড়িয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সদ্যবিলুপ্ত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী, বিএনপির একক প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাবেক এমপি এ কে এম শামীম ওসমান। প্রতিটি এলাকার রাস্তা, বাজার, দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাধারণ মানুষ এমনকি ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দরজার কড়া নেড়েছেন তারা একাধিকবার। প্রার্থীদের দফায় দফায় আগমন ও ভোট প্রার্থনার কৌশল এবং আন্তরিকতা গভীর রেখাপাত করছে ভোটরদের মনে। কোনো প্রার্থীর প্রচারণায় আন্তরিকতা অপেক্ষা বিষোদ্গার বিষয়টি যেমন সমালোচিত হচ্ছে, তেমনি ভোট প্রার্থনায় কারও বিনয়ী মনোভাব ভোটারদের কাছে হচ্ছে নন্দিত। মূলত ভোটারদের মধ্যে শামীম, তৈমূর ও আইভীর ভোট প্রার্থনা, প্রচারণা এবং গণসংযোগ নিয়ে চলছে নানা গল্প।
সরেজমিনে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের ভোটারদের সঙ্গে আলোচনা হয় খোলামেলা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোটাররা বলেন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ডা. আইভী ভোট প্রার্থনার চেয়ে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিষোদ্গারকেই নির্বাচনী প্রচারণার কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছেন। বিভিন্ন জায়গায় প্রচারণায় দোয়া অপেক্ষা অপর প্রার্থী শামীম ওসমানকে ইঙ্গিত করে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ আখ্যায়িত করে চলেছেন। এ ছাড়া নির্বাচনে সব প্রার্থীর মধ্যে তুমুল লড়াই হবে এ রকম ধারণাই জেলার রাজনৈতিক কর্মী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে। কিন্তু আইভী প্রার্থী, রাজনৈতিক কর্মী ও সাধারণ মানুষের ধারণাকে আমলেই নেননি। গত বৃহস্পতিবার গণসংযোগকালে তিনি বলেছেন, 'এ নির্বাচনে কোনো ধরনের লড়াই-ই হবে না।' তার এ রকম বক্তব্যে আত্ম-অহমিকার প্রকাশে সাধারণ ভোটারদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্তের পরে গণসংযোগকালে কথায় কথায় আরেক প্রার্থীকে ইঙ্গিত করে ভোট ডাকাতি, কারচুপি, প্রার্থীর বড় ভাইকে নিয়ে আচরণবিধি লক্সঘন, পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগেই গণসংযোগে বেশি সময় পার করছেন তিনি। আওয়ামী লীগ থেকে শামীম ওসমান সমর্থন পাওয়ার পরে আইভী তা মেনে নিতে পারেননি। এমনকি কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের শামীম ওসমানের পক্ষে প্রচারণায় নামাকে ব্যক্তিগত সম্পর্কের টান বলে অভিযোগ করছেন। শামীম ওসমান ভোটের জন্য দুয়ারে দুয়ারে ক্লান্তিহীন পথ হাঁটছেন। সমবয়সীদের বুকে জড়িয়ে নিচ্ছেন আর ছোটদের হাত বুলাচ্ছেন মাথায়। ভোটারদের সঙ্গে করছেন হাসিঠাট্টা। আনতে চাচ্ছেন উৎসবের পরিবেশ। বহুতল ভবনের দোতলা, তিনতলা চারতলার দিকে তাকিয়ে হাতজোড়ে করছেন ভোট প্রার্থনা। শুক্রবার দেওভোগ এলাকায় গিয়ে দোতলায় এক বয়োজ্যেষ্ঠ ভোটারকে সালাম দিয়ে বলেন, খালাম্মা হয় ভোট দিন, না হয় ইট দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিন। এ সময় আশপাশের সাধারণ মানুষ শামীম ওসমানের সঙ্গে হাসিঠাট্টায় মেতে ওঠে। নির্বাচনী প্রচারণাকালে বিভিন্ন মিডিয়ায় আইভীকে নিয়ে একটিবারের জন্য কটাক্ষ করেননি শামীম ওসমান। আইভীর ইঙ্গিত করা বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শামীম ওসমান আইভীকে ছোট বোন ছাড়া কোনো মন্তব্য করেননি। সিদ্ধিরগঞ্জে গণসংযোগকালে দুই প্রার্থীর (শামীম ও আইভীর) হঠাৎ দেখা হয়ে গেলে থমকে দাঁড়ান দুজনই। নীরবতা ভেঙে আইভীর দিকে এগিয়ে যান শামীম ওসমান। ছোট বোনের মাথায় মাথা লাগিয়ে বলেন, 'বোনরে আয় একসঙ্গে কাজ করি।' আইভী মৃদু হাসি ছাড়া মুখে কোনো উত্তর দেননি সে সময়। আইভীর সঙ্গে নিজ থেকে এগিয়ে গিয়ে শামীম ওসমানের কুশল বিনিময় ভোটারদের ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। প্রচারণাকালে একমাত্র আইভীকে নিয়ে মিডিয়া কোনো প্রশ্ন করলেই শামীম ওসমান আইভীর নাম মুখে নিয়ে বলছেন, 'ও আমার ছোট বোনের মতো। ওর কোনো দোষ নেই। ও অবুঝ। পেছন থেকে ওকে নিয়ে কেউ খেলছে। একদিন ভুল বুঝতে পারবে।' প্রচারণায় আইভীর মতো শামীম ওসমান কুৎসা রটনায় লিপ্ত হননি। এর ফলে ভোটাররা ইতোমধ্যেই শামীম ওসমানকে প্রশংসিত করছেন। অন্যদিকে বিএনপির একক প্রার্থী বিআরটিসির সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের জয় নিশ্চিত করতে জেলা বিএনপির শীর্ষ ও তৃণমূল নেতা-কর্মীরা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে মরণপণ লড়াই হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এ নির্বাচনে জয় তাদের পেতে হবেই। এ জন্য তারা মরণকামড় দিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন। জয় নিশ্চিত করতে এককালের ভাই হত্যার অভিযুক্ত আসামি সাবেক এমপি মো. গিয়াসউদ্দিনের সঙ্গে বিবাদ মিটিয়ে ফেলেছেন তৈমূর। যদিও তৈমূরের ভাই সাবি্বর আলম খন্দকার হত্যার সঙ্গে সাবেক এমপি গিয়াসের কোনো সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলেনি গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে। নেতা-কর্মীদের মতে এ নির্বাচন জেলা বিএনপির জন্য নানা সুফল বয়ে এনেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে জেলা বিএনপির কোন্দল ছিল একটি চিরন্তন সত্য। কিন্তু এনসিসি নির্বাচনকে ঘিরে দলের চেয়ারপারসনের নির্দেশে সবাই ঘরের বাধ্য সন্তানের মতো এক প্লাটফরমে দাঁড়িয়েছেন। বিএনপির সাবেক এমপি আবুল কালাম, গিয়াসউদ্দিন, রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জেলা সহসভাপতি বদরুজ্জামান খসরু, সহসভাপতি শিল্পপতি শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক কাজী মনিরুজ্জামান, নগর বিএনপি সাধারণ সম্পদক এ টি এম কামালসহ সব ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা মরণকামড় দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন নির্বাচনী মাঠে। নেতা-কর্মীদের মতে এ লড়াই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির। গণসংযোগকালে তৈমূর ও তার সমর্থকরা সরকারের ব্যর্থতা আর জেলার অনুন্নয়ন তুলে ধরে বিভিন্ন এলাকার উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এ ছাড়া প্রার্থীদের নিয়ে তার মুখে নেই কোনো অভিযোগ। তার যত অভিযোগ ইভিএম ও সরকার পরিচালিত প্রশাসনের বিরুদ্ধে। 'কোনো প্রার্থীর সঙ্গে লড়াই হবে না'_ আইভী এ মন্তব্য করলেও বিএনপি প্রার্থী তৈমূর কোনো প্রার্থীকেই খাটো করে দেখছেন না।
বৃষ্টিতে চলছে প্রচারণা : শামীম ওসমানের গণসংযোগ : আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এ কে এম শামীম ওসমান গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বন্দরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের একরামপুর, গোলাম আসাদ রোড, কদমরসুল রোড, উইলসন রোড এলাকায় গণসংযোগ, উঠান বৈঠক ও পথসভা করেন। বিকালে বন্দরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের নবীগঞ্জ, ইলিয়াস শাহ রোড, টি হোসেন রোড, নোয়ার্দ্দা, কাইত্যাখালি, আমিরাবাদ, চৌরাপাড়া এলাকায় গণসংযোগ, উঠান বৈঠক ও পথসভা করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বন্দর থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুর রশীদ, সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম সাগর, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ সানু ও আলেয়া বেগমসহ মহাজোট নেতারা।
এসব গণসংযোগ ও পথসভায় শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জের পরিকল্পিত উন্নয়নে ৩০ অক্টোবর দেয়ালঘড়ি প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যেহেতু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় সুতরাং আমি নির্বাচিত হলে আগে সংসদ সদস্য থাকাকালীন যে উন্নয়নের রেকর্ড করেছি তাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারব ইনশা আল্লাহ।
এদিকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরার নেতৃত্বে একটি টিম দিনভর শহরের বিভিন্ন এলাকায় শামীম ওসমানের পক্ষে দেয়ালঘড়ি প্রতীকে ভোট চান। আরও উপস্থিত ছিলেন কামরুন্নেছা মান্নান, সুলতানা বুলবুল এমপি, নূর আফরোজ আলী এমপি প্রমুখ।
এ ছাড়া ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের নেতৃত্বে সাতটি টিম শহরের হাজীগঞ্জ, খানপুর, পালপাড়া, গোয়ালপাড়া, দেওভোগ, শীতলক্ষ্যা, বাবুরাইলে শামীম ওসমানের পক্ষে প্রচারকাজ চালান। তারা দেয়ালঘড়ি প্রতীকে ভোট চেয়ে লিফলেট বিতরণ করেন। শামীম ওসমানের সহধর্মিণী সালমা ওসমান লিপি গতকাল সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বাবুরাইল, পাইকপাড়া, দেওভোগ, পালপাড়ায় গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করেন।
বিকালে নয়ামাটি এলাকায় শামীম ওসমানের পক্ষে গণসংযোগ করেন মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য সুকুমার রঞ্জন ঘোষ ও আওয়ামী লীগ নেতা মৃণাল কান্তি দাস।
এ ছাড়াও বিকালে কেন্দ্রীয় যুবলীগের একটি টিম শহরের মিশনপাড়া, ব্যাংক কলোনি, ডর চেম্বার ও খানপুরে শামীম ওসমানের পক্ষে গণসংযোগ করে। উপস্থিত ছিলেন যুবলীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য হারুন অর রশিদ, শহীদ সেরনিয়াবত, অধ্যাপক মামুনুর রশীদ, অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, অধ্যাপক এ বি এম আমজাদ, শাহ নিজাম প্রমুখ।
দিনভর শহরের হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা টানবাজার ও সাহাপাড়ায় গণসংযোগ করেন যুব মহিলা লীগ সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপিকা অপু উকিল এমপি। তারা ১০টি টিমে ভাগ হয়ে ওই সব এলাকায় দেয়ালঘড়ির লিফলেট বিতরণ করে ভোট চান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবিনা আক্তার তুহিন, নুরুন্নাহার লাভলী, চায়না ভূইয়া, শামসুন্নহার রত্না, মাহমুদা মালা, হেলেনা, রত্না রহমান প্রমুখ।
আইভীর গণসংযোগ : মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভী গতকাল সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগ আহ্বায়ক সাবেক এমপি এস এম আকরাম, শহর আওয়ামী লীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সহসভাপতি হায়দার আলী পুতুল, জেলা যুবলীগ সভাপতি আবদুল কাদির, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ আহ্বায়ক নিজামউদ্দিন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম আরাফাত প্রমুখ।
তৈমূরের গণসংযোগ : অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে এবং বিকালে হরিপুরে গণসংযোগ করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মাসুদ তালুকদার, সাবেক এমপি আবুল কালাম, নগর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল প্রমুখ।
আইভীর বিরুদ্ধে রিটার্নিং অফিসারের কাছে শামীম ওসমানের লিখিত অভিযোগ : মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ এনে গতকাল রিটার্নিং অফিসারের কাছে দুটি অভিযোগ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী শামীম ওসমান। তার পক্ষে চন্দন শীল স্বাক্ষরিত এ দুটি অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা ওয়াসার চেয়ারম্যান প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা, কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফারুক আচরণবিধি ভঙ্গ করে শুক্রবার আইভীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালান। আইভীর কর্মী-সমর্থকরা সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকার ভোটারদের তার পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছেন ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। আইভী নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে বক্তব্য, ভোটারদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রচারপত্র বিলি করছেন। শুক্রবার বিকালে শামীম ওসমানের পক্ষে দেয়ালঘড়ি প্রতীকে প্রচারণা চালানোর সময় কেন্দ্রীয় লঞ্চ টার্মিনালে বন্দর খেয়াঘাট এলাকায় আইভী নিজে শামীম ওসমানের কর্মীদের গালাগাল করেন। আইভীর বাসস্থান দেওভোগে তার কর্মী-সমর্থকরা প্রতিনিয়ত শামীম ওসমানের পোস্টার, ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলছেন। আইভী তার নির্বাচনী প্রচারণাকালে বিভিন্ন ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন এবং এক প্রার্থীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছেন। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রিটার্নিং অফিসারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
এদিকে প্রচারণা ও গণসংযোগে মরণপণ লড়াইয়ে নেমেছেন এনসিসি প্রতিদ্বন্দ্বী তিন মেয়র প্রার্থী শামীম ওসমান, তৈমূর আলম খন্দকার ও ডা. সেলিনা হায়াত আইভী। আর যেন সময় নেই তাদের হাতে। নির্বাচনের আর মাত্র ৭ দিন বাকি। এরই মধ্যে ভোটারদের মন জয় করতে হবে তাদের। তাই এ ক্ষেত্রে প্রার্থীদের কেউ কেউ বেছে নিয়েছেন নানা কৌশল। কেউ কারও বিরুদ্ধে বিষোদ্গার, কেউ ভোট প্রার্থনায় অত্যন্ত বিনয়ী, আবার কেউ বর্তমান সরকারের বিভিন্ন সেক্টরের ব্যর্থতার সমালোচনাসহ জয় নিশ্চিত করতে মরণপণ লড়াইয়ের দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করছেন। অন্যদিকে ভোটাররাও প্রার্থীদের ভোট প্রার্থনার কৌশল পর্যবেক্ষণ করছেন নিবিড়ভাবে। ইতোমধ্যে সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ২৭টি ওয়ার্ডেই চষে বেড়িয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সদ্যবিলুপ্ত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী, বিএনপির একক প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাবেক এমপি এ কে এম শামীম ওসমান। প্রতিটি এলাকার রাস্তা, বাজার, দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাধারণ মানুষ এমনকি ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দরজার কড়া নেড়েছেন তারা একাধিকবার। প্রার্থীদের দফায় দফায় আগমন ও ভোট প্রার্থনার কৌশল এবং আন্তরিকতা গভীর রেখাপাত করছে ভোটরদের মনে। কোনো প্রার্থীর প্রচারণায় আন্তরিকতা অপেক্ষা বিষোদ্গার বিষয়টি যেমন সমালোচিত হচ্ছে, তেমনি ভোট প্রার্থনায় কারও বিনয়ী মনোভাব ভোটারদের কাছে হচ্ছে নন্দিত। মূলত ভোটারদের মধ্যে শামীম, তৈমূর ও আইভীর ভোট প্রার্থনা, প্রচারণা এবং গণসংযোগ নিয়ে চলছে নানা গল্প।
সরেজমিনে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের ভোটারদের সঙ্গে আলোচনা হয় খোলামেলা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোটাররা বলেন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ডা. আইভী ভোট প্রার্থনার চেয়ে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিষোদ্গারকেই নির্বাচনী প্রচারণার কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছেন। বিভিন্ন জায়গায় প্রচারণায় দোয়া অপেক্ষা অপর প্রার্থী শামীম ওসমানকে ইঙ্গিত করে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ আখ্যায়িত করে চলেছেন। এ ছাড়া নির্বাচনে সব প্রার্থীর মধ্যে তুমুল লড়াই হবে এ রকম ধারণাই জেলার রাজনৈতিক কর্মী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে। কিন্তু আইভী প্রার্থী, রাজনৈতিক কর্মী ও সাধারণ মানুষের ধারণাকে আমলেই নেননি। গত বৃহস্পতিবার গণসংযোগকালে তিনি বলেছেন, 'এ নির্বাচনে কোনো ধরনের লড়াই-ই হবে না।' তার এ রকম বক্তব্যে আত্ম-অহমিকার প্রকাশে সাধারণ ভোটারদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্তের পরে গণসংযোগকালে কথায় কথায় আরেক প্রার্থীকে ইঙ্গিত করে ভোট ডাকাতি, কারচুপি, প্রার্থীর বড় ভাইকে নিয়ে আচরণবিধি লক্সঘন, পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগেই গণসংযোগে বেশি সময় পার করছেন তিনি। আওয়ামী লীগ থেকে শামীম ওসমান সমর্থন পাওয়ার পরে আইভী তা মেনে নিতে পারেননি। এমনকি কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের শামীম ওসমানের পক্ষে প্রচারণায় নামাকে ব্যক্তিগত সম্পর্কের টান বলে অভিযোগ করছেন। শামীম ওসমান ভোটের জন্য দুয়ারে দুয়ারে ক্লান্তিহীন পথ হাঁটছেন। সমবয়সীদের বুকে জড়িয়ে নিচ্ছেন আর ছোটদের হাত বুলাচ্ছেন মাথায়। ভোটারদের সঙ্গে করছেন হাসিঠাট্টা। আনতে চাচ্ছেন উৎসবের পরিবেশ। বহুতল ভবনের দোতলা, তিনতলা চারতলার দিকে তাকিয়ে হাতজোড়ে করছেন ভোট প্রার্থনা। শুক্রবার দেওভোগ এলাকায় গিয়ে দোতলায় এক বয়োজ্যেষ্ঠ ভোটারকে সালাম দিয়ে বলেন, খালাম্মা হয় ভোট দিন, না হয় ইট দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিন। এ সময় আশপাশের সাধারণ মানুষ শামীম ওসমানের সঙ্গে হাসিঠাট্টায় মেতে ওঠে। নির্বাচনী প্রচারণাকালে বিভিন্ন মিডিয়ায় আইভীকে নিয়ে একটিবারের জন্য কটাক্ষ করেননি শামীম ওসমান। আইভীর ইঙ্গিত করা বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শামীম ওসমান আইভীকে ছোট বোন ছাড়া কোনো মন্তব্য করেননি। সিদ্ধিরগঞ্জে গণসংযোগকালে দুই প্রার্থীর (শামীম ও আইভীর) হঠাৎ দেখা হয়ে গেলে থমকে দাঁড়ান দুজনই। নীরবতা ভেঙে আইভীর দিকে এগিয়ে যান শামীম ওসমান। ছোট বোনের মাথায় মাথা লাগিয়ে বলেন, 'বোনরে আয় একসঙ্গে কাজ করি।' আইভী মৃদু হাসি ছাড়া মুখে কোনো উত্তর দেননি সে সময়। আইভীর সঙ্গে নিজ থেকে এগিয়ে গিয়ে শামীম ওসমানের কুশল বিনিময় ভোটারদের ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। প্রচারণাকালে একমাত্র আইভীকে নিয়ে মিডিয়া কোনো প্রশ্ন করলেই শামীম ওসমান আইভীর নাম মুখে নিয়ে বলছেন, 'ও আমার ছোট বোনের মতো। ওর কোনো দোষ নেই। ও অবুঝ। পেছন থেকে ওকে নিয়ে কেউ খেলছে। একদিন ভুল বুঝতে পারবে।' প্রচারণায় আইভীর মতো শামীম ওসমান কুৎসা রটনায় লিপ্ত হননি। এর ফলে ভোটাররা ইতোমধ্যেই শামীম ওসমানকে প্রশংসিত করছেন। অন্যদিকে বিএনপির একক প্রার্থী বিআরটিসির সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের জয় নিশ্চিত করতে জেলা বিএনপির শীর্ষ ও তৃণমূল নেতা-কর্মীরা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে মরণপণ লড়াই হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এ নির্বাচনে জয় তাদের পেতে হবেই। এ জন্য তারা মরণকামড় দিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন। জয় নিশ্চিত করতে এককালের ভাই হত্যার অভিযুক্ত আসামি সাবেক এমপি মো. গিয়াসউদ্দিনের সঙ্গে বিবাদ মিটিয়ে ফেলেছেন তৈমূর। যদিও তৈমূরের ভাই সাবি্বর আলম খন্দকার হত্যার সঙ্গে সাবেক এমপি গিয়াসের কোনো সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলেনি গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে। নেতা-কর্মীদের মতে এ নির্বাচন জেলা বিএনপির জন্য নানা সুফল বয়ে এনেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে জেলা বিএনপির কোন্দল ছিল একটি চিরন্তন সত্য। কিন্তু এনসিসি নির্বাচনকে ঘিরে দলের চেয়ারপারসনের নির্দেশে সবাই ঘরের বাধ্য সন্তানের মতো এক প্লাটফরমে দাঁড়িয়েছেন। বিএনপির সাবেক এমপি আবুল কালাম, গিয়াসউদ্দিন, রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জেলা সহসভাপতি বদরুজ্জামান খসরু, সহসভাপতি শিল্পপতি শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক কাজী মনিরুজ্জামান, নগর বিএনপি সাধারণ সম্পদক এ টি এম কামালসহ সব ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা মরণকামড় দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন নির্বাচনী মাঠে। নেতা-কর্মীদের মতে এ লড়াই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির। গণসংযোগকালে তৈমূর ও তার সমর্থকরা সরকারের ব্যর্থতা আর জেলার অনুন্নয়ন তুলে ধরে বিভিন্ন এলাকার উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এ ছাড়া প্রার্থীদের নিয়ে তার মুখে নেই কোনো অভিযোগ। তার যত অভিযোগ ইভিএম ও সরকার পরিচালিত প্রশাসনের বিরুদ্ধে। 'কোনো প্রার্থীর সঙ্গে লড়াই হবে না'_ আইভী এ মন্তব্য করলেও বিএনপি প্রার্থী তৈমূর কোনো প্রার্থীকেই খাটো করে দেখছেন না।
বৃষ্টিতে চলছে প্রচারণা : শামীম ওসমানের গণসংযোগ : আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এ কে এম শামীম ওসমান গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বন্দরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের একরামপুর, গোলাম আসাদ রোড, কদমরসুল রোড, উইলসন রোড এলাকায় গণসংযোগ, উঠান বৈঠক ও পথসভা করেন। বিকালে বন্দরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের নবীগঞ্জ, ইলিয়াস শাহ রোড, টি হোসেন রোড, নোয়ার্দ্দা, কাইত্যাখালি, আমিরাবাদ, চৌরাপাড়া এলাকায় গণসংযোগ, উঠান বৈঠক ও পথসভা করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বন্দর থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুর রশীদ, সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম সাগর, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ সানু ও আলেয়া বেগমসহ মহাজোট নেতারা।
এসব গণসংযোগ ও পথসভায় শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জের পরিকল্পিত উন্নয়নে ৩০ অক্টোবর দেয়ালঘড়ি প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যেহেতু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় সুতরাং আমি নির্বাচিত হলে আগে সংসদ সদস্য থাকাকালীন যে উন্নয়নের রেকর্ড করেছি তাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারব ইনশা আল্লাহ।
এদিকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরার নেতৃত্বে একটি টিম দিনভর শহরের বিভিন্ন এলাকায় শামীম ওসমানের পক্ষে দেয়ালঘড়ি প্রতীকে ভোট চান। আরও উপস্থিত ছিলেন কামরুন্নেছা মান্নান, সুলতানা বুলবুল এমপি, নূর আফরোজ আলী এমপি প্রমুখ।
এ ছাড়া ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের নেতৃত্বে সাতটি টিম শহরের হাজীগঞ্জ, খানপুর, পালপাড়া, গোয়ালপাড়া, দেওভোগ, শীতলক্ষ্যা, বাবুরাইলে শামীম ওসমানের পক্ষে প্রচারকাজ চালান। তারা দেয়ালঘড়ি প্রতীকে ভোট চেয়ে লিফলেট বিতরণ করেন। শামীম ওসমানের সহধর্মিণী সালমা ওসমান লিপি গতকাল সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বাবুরাইল, পাইকপাড়া, দেওভোগ, পালপাড়ায় গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করেন।
বিকালে নয়ামাটি এলাকায় শামীম ওসমানের পক্ষে গণসংযোগ করেন মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য সুকুমার রঞ্জন ঘোষ ও আওয়ামী লীগ নেতা মৃণাল কান্তি দাস।
এ ছাড়াও বিকালে কেন্দ্রীয় যুবলীগের একটি টিম শহরের মিশনপাড়া, ব্যাংক কলোনি, ডর চেম্বার ও খানপুরে শামীম ওসমানের পক্ষে গণসংযোগ করে। উপস্থিত ছিলেন যুবলীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য হারুন অর রশিদ, শহীদ সেরনিয়াবত, অধ্যাপক মামুনুর রশীদ, অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, অধ্যাপক এ বি এম আমজাদ, শাহ নিজাম প্রমুখ।
দিনভর শহরের হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা টানবাজার ও সাহাপাড়ায় গণসংযোগ করেন যুব মহিলা লীগ সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপিকা অপু উকিল এমপি। তারা ১০টি টিমে ভাগ হয়ে ওই সব এলাকায় দেয়ালঘড়ির লিফলেট বিতরণ করে ভোট চান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবিনা আক্তার তুহিন, নুরুন্নাহার লাভলী, চায়না ভূইয়া, শামসুন্নহার রত্না, মাহমুদা মালা, হেলেনা, রত্না রহমান প্রমুখ।
আইভীর গণসংযোগ : মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভী গতকাল সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগ আহ্বায়ক সাবেক এমপি এস এম আকরাম, শহর আওয়ামী লীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সহসভাপতি হায়দার আলী পুতুল, জেলা যুবলীগ সভাপতি আবদুল কাদির, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ আহ্বায়ক নিজামউদ্দিন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম আরাফাত প্রমুখ।
তৈমূরের গণসংযোগ : অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে এবং বিকালে হরিপুরে গণসংযোগ করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মাসুদ তালুকদার, সাবেক এমপি আবুল কালাম, নগর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল প্রমুখ।
আইভীর বিরুদ্ধে রিটার্নিং অফিসারের কাছে শামীম ওসমানের লিখিত অভিযোগ : মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ এনে গতকাল রিটার্নিং অফিসারের কাছে দুটি অভিযোগ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী শামীম ওসমান। তার পক্ষে চন্দন শীল স্বাক্ষরিত এ দুটি অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা ওয়াসার চেয়ারম্যান প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা, কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফারুক আচরণবিধি ভঙ্গ করে শুক্রবার আইভীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালান। আইভীর কর্মী-সমর্থকরা সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকার ভোটারদের তার পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছেন ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। আইভী নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে বক্তব্য, ভোটারদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রচারপত্র বিলি করছেন। শুক্রবার বিকালে শামীম ওসমানের পক্ষে দেয়ালঘড়ি প্রতীকে প্রচারণা চালানোর সময় কেন্দ্রীয় লঞ্চ টার্মিনালে বন্দর খেয়াঘাট এলাকায় আইভী নিজে শামীম ওসমানের কর্মীদের গালাগাল করেন। আইভীর বাসস্থান দেওভোগে তার কর্মী-সমর্থকরা প্রতিনিয়ত শামীম ওসমানের পোস্টার, ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলছেন। আইভী তার নির্বাচনী প্রচারণাকালে বিভিন্ন ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন এবং এক প্রার্থীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছেন। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রিটার্নিং অফিসারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।