পুঁজিবাজার পরিস্থিতি সামাল দেওয়া নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে খালেদা জিয়া প্রশ্ন তুলেছেন, তাহলে তিনি ক্ষমতায় বসে আছেন কেন?
শেয়ারবাজারের অস্থিরতা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত মঙ্গলবার বলেন, এ পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেওয়া সম্ভব তা তিনি জানেন না।
বাজারের এ অস্থিরতা নিয়ে বুধবার খালেদা জিয়া বলেন, "৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীর অর্থ লুট করে বিদেশে পাচার করে দেওয়া হয়েছে। এজন্য আমাদের মুদ্রার দাম কমে গেছে। অন্যদিকে ডলার-পাউন্ডের দাম বেড়ে গেছে। যারা শেয়ার বাজার লুণ্ঠন করেছে তাদের বিচার হয়নি।
"এখন অর্থমন্ত্রী বলছেন, তিনি শেয়ারবাজার বোঝেন না। তাহলে তিনি ক্ষমতায় বসে আছেন কেন?"
বুধবার বিকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সরকারি কলেজ মাঠে জনসভায় বক্তব্যে তিনি এ প্রশ্ন তোলেন।
মঙ্গলবার দুপুরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, "প্রাইমারি বাজার নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা সেকেন্ডারি বাজার নিয়ে।"
"সেকেন্ডারি বাজার ঠিক করার জন্য নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এর পরেও বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে না। কীভাবে ঠিক হবে আমি জানি না," যোগ করেন মুহিত।
পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের প্রতিবাদে ব্যক্তি শ্রেণীর বিনিয়োগকারীরা গত রোববার অনশন শুরু করে। সোমবার আয়কর রেয়াতের মতো প্রণোদনা ঘোষণাসহ একটি উপদেষ্টা কমিটি করার কথা জানানো হয় সরকারের পক্ষ থেকে। কমিটিতে অর্থমন্ত্রীও থাকছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে বুধবারের জনসভা আয়োজন চার দলীয় জোট। নওগাঁর পথসভার পর রোড মার্চ করে বিকাল ৫টা আট মিনিটে খালেদা জিয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের জনসভাস্থলে পৌঁছান। প্রায় ৪০ মিনিট তিনি বক্তব্য দেন।
জনসভার মধ্য দিয়ে দুই দিনের রোড মার্চ কর্মসূচির সমাপ্তি টানেন খালেদা জিয়া। রাত সোয়া ৮টা নাগাদ তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সার্কিট হাউজ থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেন।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া রাজধানীর নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে চার দলের জনসভা থেকে রোড মার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। গত ১০ অক্টোবর তার নেতৃত্বে ঢাকা-সিলেট রোড মার্চ করে চার দল।
'মা-বোনদের থাকতে হবে'
সরকার হঠাতে আরো কঠোর ও বৃহত্তর কর্মসূচি আসবে বলেও রোড মার্চ-পরবর্তী এ জনসভায় ঘোষণা দেন খালেদা।
তিনি বলেন, ''রোড মার্চ চলছে, আরো হবে। এরপর এই জালেম সরকারকে হঠাতে আরো কঠোর ও বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া হবে। মা- বোনসহ সবাইকে ওই কর্মসূচি থাকতে হবে।"
দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্যই তার দল সরকার হটানোর এই আন্দোলনে রাজপথে নেমেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
২০০৮ সালের নির্বাচনের পর চাঁপাইনবাবগঞ্জে এটি খালেদা জিয়ার প্রথম জনসভা।
জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে দুপুর আড়াইটায় কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে জনসভার কার্যক্রম শুরু হয়।
এই জনসভার মঞ্চে চার দলের শীর্ষ নেতারা, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল অলি আহমেদসহ বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মঙ্গলবার ঢাকা থেকে রোড মার্চ শুরু করে বগুড়ায় রাতে যাত্রাবিরতি করেন খালেদা। বুধবার সকাল ১১টায় বগুড়া সার্কিট হাউজ থেকে বিরোধীদলীয় নেতা চাঁপাই নবাবগঞ্জ অভিমুখে রোড মার্চ শুরু করেন। পথে নওগাঁ এ টিম খেলার মাঠে পথসভায় বক্তব্য দেন তিনি।
এরপর খালেদা জিয়ার গাড়িবহর রাজশাহীর ওপর দিয়ে চাঁপাই নবাবগঞ্জ পর্যন্ত দীর্ঘ পথ অতিক্রমের সময় বিভিন্ন স্থানে বিএনপি ও অঙ্গগঠন এবং জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরের নেতা-কর্মীরা ব্যানার নিয়ে রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে স্বাগত জানায়।
'একতরফা সর্ম্পক হয় না'
নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের জনসভায় সরকারের 'ভারতপ্রীতি' রয়েছে দাবি করে এর সমালোচনা করেন খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, "এ সরকার বাংলাদেশকে শৃঙ্খলিত করে ফেলেছে। তারা দেশটাকে তাঁবেদার রাষ্ট্র বানাতে চায়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও অর্থনীতি অন্য দেশ নিয়ন্ত্রণ করছে। দেশের বিরুদ্ধে চলছে গভীর ষড়যন্ত্র।"
এই অবস্থা থেকে উত্তরণে জনগণকে বর্তমান 'পরাধীন সরকারের' বিরুদ্ধে প্রয়োজনে আরেকটি যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি চেয়ারপার্সন।
ভারতের সঙ্গে সমতা ভিত্তিতে সুসম্পর্ক স্থাপনের কথা তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, "কাঁটাতারের ফেলানি লাশ কেন ঝুলে থাকবে। সীমান্তে হত্যা হবে নির্বিচারে। ভারতের পণ্য অবাধে প্রবেশ করছে, কিন্তু আমাদের দেশের পণ্য সেদেশে প্রবেশাধিকার পাচ্ছে না। এভাবে একতরফা সর্ম্পক হয় না।"
যোগাযোগমন্ত্রীর সমালোচনা
যোগাযোগমন্ত্রীর নাম উল্লেখ না করে খালেদা জিয়া জনসভায় বলেন, "রোড মন্ত্রী দেশের রাস্তাঘাটের কোনো সংস্কার করতে পারেননি। সব টাকা নিজের পকেটে নিয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণের আগেই সব টাকা আত্মসাৎ করেছেন।"
সরকারের দুর্নীতির কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও জাইকা অর্থায়ন বন্ধ করেছে দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, "সেতু নির্মাণ হওয়ার আগে সরকার সব অর্থ গিলে খেয়ে ফেলেছে।"
তবে সরকারি ভাষ্যমতে, পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য প্রতিশ্র"ত ঋণের কোনো অর্থ দাতা সংস্থাগুলো এখনো ছাড় করেনি।
এর আগে নওগাঁর জনসভায়ও খালেদা মন্তব্য করেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পের অর্থ সরকার 'গিলে খেয়ে ফেলেছে'।
নির্বাচন কমিশন
বর্তমান নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ বলে আবারো ন্তব্য করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা।
তিনি বলেন, "গণতন্ত্র রক্ষার জন্য সঠিক সময়ে আমরা নির্বাচন চাই। কিন্তু তা হতে হবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন এদেশে হতে দেওয়া হবে না। গঠন করতে হবে নির্দলীয় নির্বাচন কমিশন।"
"সব দলের সঙ্গে আলোচনা করেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।"
গত ১১ অক্টোবর সিলেটের জনসভায়ও একই অভিযোগ করেছিলেন খালেদা।
গত ৩০ জুন সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হয়। এর আগে সর্বোচ্চ আদালত এ ব্যবস্থা বাতিল করে।
সংবিধান সংশোধনের আগ থেকেই বিএনপি এ ব্যবস্থা বাতিলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। পরে এ ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি তুলে চলেছে দলটি।
প্রধানমন্ত্রীর দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন
বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
"দেশের মানুষ খেতে পায় না। ডাস্টবিনের খাদ্য খায়," দাবি করে খালেদা বলেন, "সেখানে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফর করে বেড়ান। তার পরিবারের সদস্যরা দেশে থাকেন না। বিদেশিদের সঙ্গে আত্মীয়তা করেন। যাদের দেশে কেউ থাকেন না তাদের দেশপ্রেমও নেই। দেশের প্রতি তাদের দায়িত্বও নেই।"
তিনি বলেন, "প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যরা বিয়েও করেন বিদেশি।"
নতুন প্রজন্মের প্রতি আবারো আহবান
গত ১১ অক্টোবরের সিলেট জনসভার পর বুধবারের চাঁপাইনবাবগঞ্জের বনসভায়ও তরুণ প্রজন্মকে জেগে ওঠার আহ্বান জানান খালেদা।
তিনি বলেন, "বর্তমান সরকার নতুন প্রজন্মের জন্য কিছুই করবে না। তোমাদের (যুবক) বলছি, তোমরা কি কেবল স্লোগান দেবে, রাস্তায় থাকবে। তোমাদের নেশা করিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখে ক্ষমতাসীন দেশের সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার করছে। এটা চলতে পারে না।"
তার দল ক্ষমতায় গেলে তরুণ সমাজের কর্মসংস্থানসহ নেতৃত্ব পর্যায়ে দায়িত্ব দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি।
গত ১১ অক্টোবর সিলেটে চার দলের জনসভায় খালেদা বলেছিলেন, তার দল আগামীতে ক্ষমতায় গেলে একটি কমিটি করে তরুণদের হাতে দায়িত্ব দেবে।
বিএনপি জেলা সভাপতি অধ্যাপক শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে জনসভায় অন্যদের মধ্যে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল অলি আহমেদ, জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মজিবুর রহমান, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আবদুল লতিফ নেজামী, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি শফিউল আলম প্রধান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান, নজরুল ইসলাম খান প্রমুখও বক্তব্য দেন।
জনসভার পর খালেদা জিয়া সার্কিট হাউজে যান। সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন বলে জানান তার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান।
শেয়ারবাজারের অস্থিরতা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত মঙ্গলবার বলেন, এ পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেওয়া সম্ভব তা তিনি জানেন না।
বাজারের এ অস্থিরতা নিয়ে বুধবার খালেদা জিয়া বলেন, "৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীর অর্থ লুট করে বিদেশে পাচার করে দেওয়া হয়েছে। এজন্য আমাদের মুদ্রার দাম কমে গেছে। অন্যদিকে ডলার-পাউন্ডের দাম বেড়ে গেছে। যারা শেয়ার বাজার লুণ্ঠন করেছে তাদের বিচার হয়নি।
"এখন অর্থমন্ত্রী বলছেন, তিনি শেয়ারবাজার বোঝেন না। তাহলে তিনি ক্ষমতায় বসে আছেন কেন?"
বুধবার বিকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সরকারি কলেজ মাঠে জনসভায় বক্তব্যে তিনি এ প্রশ্ন তোলেন।
মঙ্গলবার দুপুরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, "প্রাইমারি বাজার নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা সেকেন্ডারি বাজার নিয়ে।"
"সেকেন্ডারি বাজার ঠিক করার জন্য নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এর পরেও বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে না। কীভাবে ঠিক হবে আমি জানি না," যোগ করেন মুহিত।
পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের প্রতিবাদে ব্যক্তি শ্রেণীর বিনিয়োগকারীরা গত রোববার অনশন শুরু করে। সোমবার আয়কর রেয়াতের মতো প্রণোদনা ঘোষণাসহ একটি উপদেষ্টা কমিটি করার কথা জানানো হয় সরকারের পক্ষ থেকে। কমিটিতে অর্থমন্ত্রীও থাকছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে বুধবারের জনসভা আয়োজন চার দলীয় জোট। নওগাঁর পথসভার পর রোড মার্চ করে বিকাল ৫টা আট মিনিটে খালেদা জিয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের জনসভাস্থলে পৌঁছান। প্রায় ৪০ মিনিট তিনি বক্তব্য দেন।
জনসভার মধ্য দিয়ে দুই দিনের রোড মার্চ কর্মসূচির সমাপ্তি টানেন খালেদা জিয়া। রাত সোয়া ৮টা নাগাদ তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সার্কিট হাউজ থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেন।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া রাজধানীর নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে চার দলের জনসভা থেকে রোড মার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। গত ১০ অক্টোবর তার নেতৃত্বে ঢাকা-সিলেট রোড মার্চ করে চার দল।
'মা-বোনদের থাকতে হবে'
সরকার হঠাতে আরো কঠোর ও বৃহত্তর কর্মসূচি আসবে বলেও রোড মার্চ-পরবর্তী এ জনসভায় ঘোষণা দেন খালেদা।
তিনি বলেন, ''রোড মার্চ চলছে, আরো হবে। এরপর এই জালেম সরকারকে হঠাতে আরো কঠোর ও বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া হবে। মা- বোনসহ সবাইকে ওই কর্মসূচি থাকতে হবে।"
দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্যই তার দল সরকার হটানোর এই আন্দোলনে রাজপথে নেমেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
২০০৮ সালের নির্বাচনের পর চাঁপাইনবাবগঞ্জে এটি খালেদা জিয়ার প্রথম জনসভা।
জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে দুপুর আড়াইটায় কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে জনসভার কার্যক্রম শুরু হয়।
এই জনসভার মঞ্চে চার দলের শীর্ষ নেতারা, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল অলি আহমেদসহ বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মঙ্গলবার ঢাকা থেকে রোড মার্চ শুরু করে বগুড়ায় রাতে যাত্রাবিরতি করেন খালেদা। বুধবার সকাল ১১টায় বগুড়া সার্কিট হাউজ থেকে বিরোধীদলীয় নেতা চাঁপাই নবাবগঞ্জ অভিমুখে রোড মার্চ শুরু করেন। পথে নওগাঁ এ টিম খেলার মাঠে পথসভায় বক্তব্য দেন তিনি।
এরপর খালেদা জিয়ার গাড়িবহর রাজশাহীর ওপর দিয়ে চাঁপাই নবাবগঞ্জ পর্যন্ত দীর্ঘ পথ অতিক্রমের সময় বিভিন্ন স্থানে বিএনপি ও অঙ্গগঠন এবং জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরের নেতা-কর্মীরা ব্যানার নিয়ে রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে স্বাগত জানায়।
'একতরফা সর্ম্পক হয় না'
নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের জনসভায় সরকারের 'ভারতপ্রীতি' রয়েছে দাবি করে এর সমালোচনা করেন খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, "এ সরকার বাংলাদেশকে শৃঙ্খলিত করে ফেলেছে। তারা দেশটাকে তাঁবেদার রাষ্ট্র বানাতে চায়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও অর্থনীতি অন্য দেশ নিয়ন্ত্রণ করছে। দেশের বিরুদ্ধে চলছে গভীর ষড়যন্ত্র।"
এই অবস্থা থেকে উত্তরণে জনগণকে বর্তমান 'পরাধীন সরকারের' বিরুদ্ধে প্রয়োজনে আরেকটি যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি চেয়ারপার্সন।
ভারতের সঙ্গে সমতা ভিত্তিতে সুসম্পর্ক স্থাপনের কথা তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, "কাঁটাতারের ফেলানি লাশ কেন ঝুলে থাকবে। সীমান্তে হত্যা হবে নির্বিচারে। ভারতের পণ্য অবাধে প্রবেশ করছে, কিন্তু আমাদের দেশের পণ্য সেদেশে প্রবেশাধিকার পাচ্ছে না। এভাবে একতরফা সর্ম্পক হয় না।"
যোগাযোগমন্ত্রীর সমালোচনা
যোগাযোগমন্ত্রীর নাম উল্লেখ না করে খালেদা জিয়া জনসভায় বলেন, "রোড মন্ত্রী দেশের রাস্তাঘাটের কোনো সংস্কার করতে পারেননি। সব টাকা নিজের পকেটে নিয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণের আগেই সব টাকা আত্মসাৎ করেছেন।"
সরকারের দুর্নীতির কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও জাইকা অর্থায়ন বন্ধ করেছে দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, "সেতু নির্মাণ হওয়ার আগে সরকার সব অর্থ গিলে খেয়ে ফেলেছে।"
তবে সরকারি ভাষ্যমতে, পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য প্রতিশ্র"ত ঋণের কোনো অর্থ দাতা সংস্থাগুলো এখনো ছাড় করেনি।
এর আগে নওগাঁর জনসভায়ও খালেদা মন্তব্য করেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পের অর্থ সরকার 'গিলে খেয়ে ফেলেছে'।
নির্বাচন কমিশন
বর্তমান নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ বলে আবারো ন্তব্য করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা।
তিনি বলেন, "গণতন্ত্র রক্ষার জন্য সঠিক সময়ে আমরা নির্বাচন চাই। কিন্তু তা হতে হবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন এদেশে হতে দেওয়া হবে না। গঠন করতে হবে নির্দলীয় নির্বাচন কমিশন।"
"সব দলের সঙ্গে আলোচনা করেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।"
গত ১১ অক্টোবর সিলেটের জনসভায়ও একই অভিযোগ করেছিলেন খালেদা।
গত ৩০ জুন সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হয়। এর আগে সর্বোচ্চ আদালত এ ব্যবস্থা বাতিল করে।
সংবিধান সংশোধনের আগ থেকেই বিএনপি এ ব্যবস্থা বাতিলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। পরে এ ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি তুলে চলেছে দলটি।
প্রধানমন্ত্রীর দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন
বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
"দেশের মানুষ খেতে পায় না। ডাস্টবিনের খাদ্য খায়," দাবি করে খালেদা বলেন, "সেখানে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফর করে বেড়ান। তার পরিবারের সদস্যরা দেশে থাকেন না। বিদেশিদের সঙ্গে আত্মীয়তা করেন। যাদের দেশে কেউ থাকেন না তাদের দেশপ্রেমও নেই। দেশের প্রতি তাদের দায়িত্বও নেই।"
তিনি বলেন, "প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যরা বিয়েও করেন বিদেশি।"
নতুন প্রজন্মের প্রতি আবারো আহবান
গত ১১ অক্টোবরের সিলেট জনসভার পর বুধবারের চাঁপাইনবাবগঞ্জের বনসভায়ও তরুণ প্রজন্মকে জেগে ওঠার আহ্বান জানান খালেদা।
তিনি বলেন, "বর্তমান সরকার নতুন প্রজন্মের জন্য কিছুই করবে না। তোমাদের (যুবক) বলছি, তোমরা কি কেবল স্লোগান দেবে, রাস্তায় থাকবে। তোমাদের নেশা করিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখে ক্ষমতাসীন দেশের সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার করছে। এটা চলতে পারে না।"
তার দল ক্ষমতায় গেলে তরুণ সমাজের কর্মসংস্থানসহ নেতৃত্ব পর্যায়ে দায়িত্ব দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি।
গত ১১ অক্টোবর সিলেটে চার দলের জনসভায় খালেদা বলেছিলেন, তার দল আগামীতে ক্ষমতায় গেলে একটি কমিটি করে তরুণদের হাতে দায়িত্ব দেবে।
বিএনপি জেলা সভাপতি অধ্যাপক শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে জনসভায় অন্যদের মধ্যে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল অলি আহমেদ, জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মজিবুর রহমান, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আবদুল লতিফ নেজামী, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি শফিউল আলম প্রধান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান, নজরুল ইসলাম খান প্রমুখও বক্তব্য দেন।
জনসভার পর খালেদা জিয়া সার্কিট হাউজে যান। সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন বলে জানান তার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান।