প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি আমলে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দুর্নীতির কারণেই বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন স্থগিত করেছে।
বুধবার লালমনিরহাটে এক জনসভায় তিনি বলেন, "আমার কাছে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক যে দুর্নীতির ডকুমেন্ট দিয়েছে, তা তাদের (চারদলীয় জোট সরকার) আমলের যোগাযোগমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। দুটি ডকুমেন্টই বিএনপির যোগাযোগমন্ত্রীর ডকুমেন্ট। চোরের মায়ের বড় গলা।"
পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক কিছু দিন আগেই অর্থায়ন স্থগিতের ঘোষণা দেয়। বিরোধী দল দাবি করছে, সরকারের দুর্নীতির কারণেই পদ্মা সেতু নিয়ে এ জটিলতা তৈরি হয়েছে। তবে সরকারি দলের পক্ষ থেকে দুর্নীতির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে।
পদ্মা সেতুর কথিত দুর্নীতির তদন্তের নির্দেশ ইতোমধ্যে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দুর্নীতি দমন কমিশন কাজও শুরু করেছে।
দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহলে যাওয়ার পথ তিন বিঘা করিডোর পরিদর্শনের পর পাটগ্রাম সরকারি জসিমুদ্দিন কাজী আব্দুল গণি ডিগ্রি কলেজ মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা।
বক্তব্যে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার রোড মার্চ কর্মসূচির সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে ভারতের সঙ্গে চুক্তি শিগগিরই হবে বলে জানান তিনি। তিস্তার ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাসও দেন প্রধানমন্ত্রী।
লালমনিরহাটে আড়াইশ প্রাথমিক বিদ্যালয় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লালমনিরহাট সরকারি কলেজে মাস্টার্স কোর্স এবং পাটগ্রাম কলেজে অনার্স কোর্স চালু করা হবে।
এছাড়া এ জেলায় একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটও স্থাপন করার আশ্বাসও দেন প্রধানমন্ত্রী। তিস্তা নদীর ভাঙনরোধে কাজ চলছে বলে জানান তিনি।
আওয়ামী লীগের এ জনসভায় মহাজোট শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদও বক্তব্য রাখেন। মন্ত্রীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাহারা খাতুন, দীপু মনি, মোতাহার হোসেন, এ বি এম তাজুল ইসলাম।
পাটগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম নাজুর সভাপতিত্বে সভায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সংসদ সদস্য ফজলে রাব্বি মিয়া, লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমানও বক্তব্য রাখেন।
বুধবার সকালে বিমানে করে সৈয়দপুর যান প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে লালমনিরহাট পৌঁছান তিদনি। এরপর দহগ্রাম দ্বিমুখী বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা বিদ্যুৎ সঞ্চালন কার্যক্রম, দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ ভবন এবং ১০ শয্যার দহগ্রাম হাসপাতাল উদ্বোধন করেন তিনি।
দুপুরে প্রধানমন্ত্রী তিন বিঘা করিডোরে যান। সেখানে তাকে স্বাগত জানান ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী গোলাম নবী আজাদ ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র প্রসাদ সিং। করিডোর পরিদর্শন শেষে প্রধানমন্ত্রী সেখানে একটি লিচু গাছের চারা রোপণ করেন।
'সব গাড়ির নম্বর আছে'
জনসভায় বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী চারদলীয় জোটের রোড মার্চের সমালোচনা করে বলেন, "বিরোধী দলের নেতা রোড মার্চ করছেন, কিন্তু এটা রোড মার্চ নয়, এটা হলো গাড়ির শোডাউন। ক্ষমতায় থাকতে দুর্নীতি করে কত টাকা করেছেন, তার প্রমাণ আছে। রোড মার্চের গাড়ির নম্বর আমাদের কাছে আছে। এগুলোর তদন্ত করা হবে।"
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে বুধবারই উত্তরাঞ্চলে রোড মার্চ শেষ করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। এর আগে ঢাকা-সিলেট রোড মার্চ করেছেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, "উনার (খালেদা) ছেলেরা দুর্নীতি করে বিদেশে টাকা পাঠাতে পারছেন না, উনি দুর্নীতি করতে পারছেন না। এটাই তার দুঃখ। মানুষ যখন শান্তিতে থাকেন, বিএনপির নেত্রী তখন অশান্তিতে থাকেন।"
খালেদা জিয়ার আন্দোলনের হুমকির জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, "আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূল করেছে। মানুষ শান্তিতে ঘুমাচ্ছেন। পেট ভরে ভাত খাচ্ছেন। এটা খালেদার সহ্য হচ্ছে না। তাই তিনি মানুষের ঘরে ঘরে আগুন জ্বালানোর কথা বলেছেন।
"আপনি মানুষের ঘরে আগুন দিয়ে কেন ধ্বংস করতে চান। আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ঘরে ঘরে আগুন দেওয়া কেন, কারো শান্তিও বিনষ্ট করতে দেওয়া হবে না।"
'উদ্দেশ্য যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করা'
শেখ হাসিনা বলেন, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের 'রক্ষা'ই খালেদার জিয়ার সরকার পতনের আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য।
"যুদ্ধাপরাধী, খুনি, রাজাকার ও মানবতাবিরোধীদের রক্ষায় তিনি (খালেদা) উঠেপড়ে লেগেছেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্র"য়ারি ভোট চুরি করে এদের তিনি জাতীয় সংসদেও বসিয়েছিলেন। কারণ তিনি দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না, দেশের কল্যাণেও বিশ্বাস করেন না।"
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিএনপির জোটসঙ্গী জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি বিএনপির সাবেক ও বর্তমান দুই সংসদ সদস্য গ্রেপ্তার রয়েছেন। খালেদা জিয়া তাদের মুক্তি দাবি করে আসছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা বিশ্ব সভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই। কিন্তু বিরোধী নেত্রী চান, মাথা হেঁট করে চলতে। দুর্নীতি তার নীতি। তিনি জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নিয়েই থাকতে চান।
'দেশের প্রতি তার ভালোবাসা নেই'
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, "উনি আমার ধর্ম নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু আমি আমার ১৪ পুরুষের নাম বলতে পারবো।"
"উনাকে তার নানার নাম বলতে বললে বলতে পারবেন না। তিনি জিয়াউর রহমানের বাবা-মায়ের নাম এমনকি কোথায় তাদের কবর আছে, তাও বলতে পারবেন না। তার দেশের প্রতিও দায়িত্ব ও ভালোবাসা নেই।"
দুর্গাপূজার সময় শেখ হাসিনার একটি বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় খালেদা জিয়া সিলেটের জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
হাসিনা বলেন, "বিএনপির আমলে আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীদের হত্যা ও নির্যাতনের মামলাগুলো চালু করে তাদের বিচার করা হবে।"
২০০১ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ২১ হাজার নেতাকর্মী বিএনপির হত্যা ও নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, "আমরা প্রতিশোধ নিতে চাই না। আইন তার আপন গতিতে চলবে।"
'ছিটমহল-তিস্তা সমস্যার সমাধান হবে'
তিন বিঘা করিডোর দিন-রাত খোলা থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "বিএনপি এ সমস্যা সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তিন বিঘা করিডোর ২৪ ঘণ্টার জন্য খুলে দেওয়ায় বন্দিদশা থেকে এখানকার মানুষ মুক্তি পেয়েছেন।"
তিনি বলেন, দেশের প্রত্যেকটি ছিটমহলের সমস্যার সমাধান করা হবে এবং সীমানা পুনর্র্নিধারণের কাজও চলছে।
গত ৬ সেপ্টেম্বর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় দুই প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার দুই দিনের মাথায় ৮ সেপ্টেম্বর সব সময়ের জন্য খুলে দেওয়া হয় দহগ্রাম-আঙ্গরপোতার প্রবেশদ্বার তিন বিঘা করিডোর।
এর আগ পর্যন্ত ওই করিডোর দিয়ে ভারতের নিরাপত্তারক্ষীদের পাহারার মধ্যে কেবল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলাচল করতে পারতো বাংলাদেশিরা। সন্ধ্যার পর বন্ধ হয়ে যেতো 'তিন বিঘা গেইট'।
তিন বিঘা করিডোর পরিদর্শনের সময় শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের বলেন, "ভারতের সঙ্গে বর্তমান সময়ের মতো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকলে এক দিন সব সমস্যার সমাধান হবে। আশা করছি, শিগগির তিস্তা চুক্তি করতে পারবো।"
ছিটমহল বিনিময়ের বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, "ইতোমধ্যে প্রটোকল সম্পন্ন করেছি। আশা করছি, এ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান হবে।"
তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি শিগগিরই হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালীন গঙ্গা ও তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করেছে। তিস্তার ন্যায্য হিস্যাও আদায় করা হবে।"
আমার বিরোধিতা করে আপনি গণতন্ত্র এনেছেন: এরশাদ
জনসভায় সামরিক শাসক এরশাদ প্রধানমন্ত্রীর সফলতা কামনা করে বলেন, "আমার বিরোধিতা করে আপনি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সংগ্রাম করে যান। জয়ী হউন।"
দেশের অন্য ছিটমহলবাসীর বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, "আমি আশা করবো, আপনি তাদের মুক্ত করবেন।"
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, "নির্বাচনে আসুন, জয়ী হোন। দুই-তৃতীয়াংশ আসন পেয়ে সংসদে বিল উত্থাপন করেন। এরপর তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পরিবর্তন করুন।"
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবিতে আন্দোলন করে বিরোধী দল দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বুধবার লালমনিরহাটে এক জনসভায় তিনি বলেন, "আমার কাছে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক যে দুর্নীতির ডকুমেন্ট দিয়েছে, তা তাদের (চারদলীয় জোট সরকার) আমলের যোগাযোগমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। দুটি ডকুমেন্টই বিএনপির যোগাযোগমন্ত্রীর ডকুমেন্ট। চোরের মায়ের বড় গলা।"
পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক কিছু দিন আগেই অর্থায়ন স্থগিতের ঘোষণা দেয়। বিরোধী দল দাবি করছে, সরকারের দুর্নীতির কারণেই পদ্মা সেতু নিয়ে এ জটিলতা তৈরি হয়েছে। তবে সরকারি দলের পক্ষ থেকে দুর্নীতির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে।
পদ্মা সেতুর কথিত দুর্নীতির তদন্তের নির্দেশ ইতোমধ্যে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দুর্নীতি দমন কমিশন কাজও শুরু করেছে।
দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহলে যাওয়ার পথ তিন বিঘা করিডোর পরিদর্শনের পর পাটগ্রাম সরকারি জসিমুদ্দিন কাজী আব্দুল গণি ডিগ্রি কলেজ মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা।
বক্তব্যে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার রোড মার্চ কর্মসূচির সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে ভারতের সঙ্গে চুক্তি শিগগিরই হবে বলে জানান তিনি। তিস্তার ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাসও দেন প্রধানমন্ত্রী।
লালমনিরহাটে আড়াইশ প্রাথমিক বিদ্যালয় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লালমনিরহাট সরকারি কলেজে মাস্টার্স কোর্স এবং পাটগ্রাম কলেজে অনার্স কোর্স চালু করা হবে।
এছাড়া এ জেলায় একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটও স্থাপন করার আশ্বাসও দেন প্রধানমন্ত্রী। তিস্তা নদীর ভাঙনরোধে কাজ চলছে বলে জানান তিনি।
আওয়ামী লীগের এ জনসভায় মহাজোট শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদও বক্তব্য রাখেন। মন্ত্রীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাহারা খাতুন, দীপু মনি, মোতাহার হোসেন, এ বি এম তাজুল ইসলাম।
পাটগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম নাজুর সভাপতিত্বে সভায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সংসদ সদস্য ফজলে রাব্বি মিয়া, লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমানও বক্তব্য রাখেন।
বুধবার সকালে বিমানে করে সৈয়দপুর যান প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে লালমনিরহাট পৌঁছান তিদনি। এরপর দহগ্রাম দ্বিমুখী বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা বিদ্যুৎ সঞ্চালন কার্যক্রম, দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ ভবন এবং ১০ শয্যার দহগ্রাম হাসপাতাল উদ্বোধন করেন তিনি।
দুপুরে প্রধানমন্ত্রী তিন বিঘা করিডোরে যান। সেখানে তাকে স্বাগত জানান ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী গোলাম নবী আজাদ ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র প্রসাদ সিং। করিডোর পরিদর্শন শেষে প্রধানমন্ত্রী সেখানে একটি লিচু গাছের চারা রোপণ করেন।
'সব গাড়ির নম্বর আছে'
জনসভায় বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী চারদলীয় জোটের রোড মার্চের সমালোচনা করে বলেন, "বিরোধী দলের নেতা রোড মার্চ করছেন, কিন্তু এটা রোড মার্চ নয়, এটা হলো গাড়ির শোডাউন। ক্ষমতায় থাকতে দুর্নীতি করে কত টাকা করেছেন, তার প্রমাণ আছে। রোড মার্চের গাড়ির নম্বর আমাদের কাছে আছে। এগুলোর তদন্ত করা হবে।"
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে বুধবারই উত্তরাঞ্চলে রোড মার্চ শেষ করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। এর আগে ঢাকা-সিলেট রোড মার্চ করেছেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, "উনার (খালেদা) ছেলেরা দুর্নীতি করে বিদেশে টাকা পাঠাতে পারছেন না, উনি দুর্নীতি করতে পারছেন না। এটাই তার দুঃখ। মানুষ যখন শান্তিতে থাকেন, বিএনপির নেত্রী তখন অশান্তিতে থাকেন।"
খালেদা জিয়ার আন্দোলনের হুমকির জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, "আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূল করেছে। মানুষ শান্তিতে ঘুমাচ্ছেন। পেট ভরে ভাত খাচ্ছেন। এটা খালেদার সহ্য হচ্ছে না। তাই তিনি মানুষের ঘরে ঘরে আগুন জ্বালানোর কথা বলেছেন।
"আপনি মানুষের ঘরে আগুন দিয়ে কেন ধ্বংস করতে চান। আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ঘরে ঘরে আগুন দেওয়া কেন, কারো শান্তিও বিনষ্ট করতে দেওয়া হবে না।"
'উদ্দেশ্য যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করা'
শেখ হাসিনা বলেন, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের 'রক্ষা'ই খালেদার জিয়ার সরকার পতনের আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য।
"যুদ্ধাপরাধী, খুনি, রাজাকার ও মানবতাবিরোধীদের রক্ষায় তিনি (খালেদা) উঠেপড়ে লেগেছেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্র"য়ারি ভোট চুরি করে এদের তিনি জাতীয় সংসদেও বসিয়েছিলেন। কারণ তিনি দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না, দেশের কল্যাণেও বিশ্বাস করেন না।"
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিএনপির জোটসঙ্গী জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি বিএনপির সাবেক ও বর্তমান দুই সংসদ সদস্য গ্রেপ্তার রয়েছেন। খালেদা জিয়া তাদের মুক্তি দাবি করে আসছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা বিশ্ব সভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই। কিন্তু বিরোধী নেত্রী চান, মাথা হেঁট করে চলতে। দুর্নীতি তার নীতি। তিনি জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নিয়েই থাকতে চান।
'দেশের প্রতি তার ভালোবাসা নেই'
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, "উনি আমার ধর্ম নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু আমি আমার ১৪ পুরুষের নাম বলতে পারবো।"
"উনাকে তার নানার নাম বলতে বললে বলতে পারবেন না। তিনি জিয়াউর রহমানের বাবা-মায়ের নাম এমনকি কোথায় তাদের কবর আছে, তাও বলতে পারবেন না। তার দেশের প্রতিও দায়িত্ব ও ভালোবাসা নেই।"
দুর্গাপূজার সময় শেখ হাসিনার একটি বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় খালেদা জিয়া সিলেটের জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
হাসিনা বলেন, "বিএনপির আমলে আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীদের হত্যা ও নির্যাতনের মামলাগুলো চালু করে তাদের বিচার করা হবে।"
২০০১ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ২১ হাজার নেতাকর্মী বিএনপির হত্যা ও নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, "আমরা প্রতিশোধ নিতে চাই না। আইন তার আপন গতিতে চলবে।"
'ছিটমহল-তিস্তা সমস্যার সমাধান হবে'
তিন বিঘা করিডোর দিন-রাত খোলা থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "বিএনপি এ সমস্যা সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তিন বিঘা করিডোর ২৪ ঘণ্টার জন্য খুলে দেওয়ায় বন্দিদশা থেকে এখানকার মানুষ মুক্তি পেয়েছেন।"
তিনি বলেন, দেশের প্রত্যেকটি ছিটমহলের সমস্যার সমাধান করা হবে এবং সীমানা পুনর্র্নিধারণের কাজও চলছে।
গত ৬ সেপ্টেম্বর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় দুই প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার দুই দিনের মাথায় ৮ সেপ্টেম্বর সব সময়ের জন্য খুলে দেওয়া হয় দহগ্রাম-আঙ্গরপোতার প্রবেশদ্বার তিন বিঘা করিডোর।
এর আগ পর্যন্ত ওই করিডোর দিয়ে ভারতের নিরাপত্তারক্ষীদের পাহারার মধ্যে কেবল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলাচল করতে পারতো বাংলাদেশিরা। সন্ধ্যার পর বন্ধ হয়ে যেতো 'তিন বিঘা গেইট'।
তিন বিঘা করিডোর পরিদর্শনের সময় শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের বলেন, "ভারতের সঙ্গে বর্তমান সময়ের মতো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকলে এক দিন সব সমস্যার সমাধান হবে। আশা করছি, শিগগির তিস্তা চুক্তি করতে পারবো।"
ছিটমহল বিনিময়ের বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, "ইতোমধ্যে প্রটোকল সম্পন্ন করেছি। আশা করছি, এ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান হবে।"
তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি শিগগিরই হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালীন গঙ্গা ও তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করেছে। তিস্তার ন্যায্য হিস্যাও আদায় করা হবে।"
আমার বিরোধিতা করে আপনি গণতন্ত্র এনেছেন: এরশাদ
জনসভায় সামরিক শাসক এরশাদ প্রধানমন্ত্রীর সফলতা কামনা করে বলেন, "আমার বিরোধিতা করে আপনি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সংগ্রাম করে যান। জয়ী হউন।"
দেশের অন্য ছিটমহলবাসীর বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, "আমি আশা করবো, আপনি তাদের মুক্ত করবেন।"
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, "নির্বাচনে আসুন, জয়ী হোন। দুই-তৃতীয়াংশ আসন পেয়ে সংসদে বিল উত্থাপন করেন। এরপর তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পরিবর্তন করুন।"
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবিতে আন্দোলন করে বিরোধী দল দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
0 comments:
Post a Comment