মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরে তিস্তা চুক্তি না হওয়ায় বাংলাদেশের সব অর্জন ম্লান হয়ে গেছে বলে মনে করেন খোদ মন্ত্রীরা। এ 'ব্যর্থতার' জন্য চুক্তির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টা কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েন মন্ত্রিসভায়।
সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনার নানা বিষয় তুলে ধরে একজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ কথা জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, "মন্ত্রিসভার সদস্যরা দুই উপদেষ্টার সমালোচনা করে বলেন এ সফরে সীমান্ত বিরোধ নিস্পত্তি ও ছিটমহল বিনিময়সহ বাংলাদেশের অনেক অর্জন থাকলেও তিস্তার কারণে সব অর্জন ম্লান হয়েছে। এর দায় বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের উপদেষ্টাদেরই।"
মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের আগে প্রস্তুতির বিষয়গুলো চূড়ান্ত করতে গত ১৬ অগাস্ট নয়াদিল্লি যান প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা মশিউর রহমান ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী।
গত ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সফরে আসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। এই সফরে তিস্তা ও ফেনী নদীর পানি বণ্টন চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তিতে শেষ মুহূর্তে তা ভেস্তে যায়। ভারতকে ট্রানজিট দেওয়ার বিষয়টিও সে কারণে ঝুলে গেছে- এমন কথাও শোনা গেছে।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী এসব বিষয়ে আলোচনার সত্যতা স্বীকার করেন। তবে তারা এ ব্যাপারে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে নিজেদের নাম প্রকাশ করতে সম্মত হননি।
তারা জানান, বৈঠকে মন্ত্রীরা সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টাদের ব্যর্থতার অভিযোগ তুললেও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইতিবাচক।
প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেন, এ নিয়ে শুধু উপদেষ্টাদের দোষ দিলেই চলবে না। শুধু উপদেষ্টারাই চুক্তির জন্য দৌড়-ঝাঁপ করেননি। এ নিয়ে নিচের বিভিন্ন পর্যায়েও আলোচনা হয়েছে। যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) এ নিয়ে বৈঠক করে সবকিছু চূড়ান্ত করেছে। চুক্তি হয়নি অন্য কারণে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের কারণে চুক্তিটি করা সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নিজেও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ছিটমহল বিনিময় ও সীমান্ত বিরোধ নিস্পত্তির বিষয় তুলে ধরেন। একই সঙ্গে ভারতকে ট্রানজিট না দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শক্ত অবস্থানের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ব্যাপারে বাংলাদেশ শক্ত অবস্থান নিয়েছে। কারণ এ মুহূর্তে ভারতে সড়কপথে ট্রানজিট দেওয়ার মতো অবকাঠামো আমাদের নেই। এজন্য অনেক সময় অপেক্ষা করতে হবে। আমাদের সে ধরনের অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। শুধু নৌ ও রেলপথে ট্রানজিট দেওয়া যেতে পারে। তাও উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে হতে পারে।
ট্রানজিট ও তিস্তা চুক্তি ইস্যুতে বিরোধী দলের অবস্থানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা তো হরতাল দেওয়ার জন্য মুখিয়ে ছিলো। কিন্তু আমরা ভুল না করায় তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এটাও এ সফরের একটা বড় সাফল্য।
0 comments:
Post a Comment