SPORTS JOBS 7WONDERS

Ads by Cash-71

মতিয়া গং প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত

Posted by methun

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ নেতা ও স্বাধীন দেশের প্রথম নির্বাচিত সংসদের আলোচিত পার্লামেন্টারিয়ান নূরে আলম সিদ্দিকী বলেছেন, জনবিচ্ছিন্ন মতিয়া গং প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। ওরাই সরকার চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগের জোয়ারে ভাটার টান লাগতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের এই জাতীয় বীর বললেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই। তাই মুজিবকন্যার কাছে প্রত্যাশা যেমন তেমনি আছে আশঙ্কাও। আওয়ামী লীগ ঘুরে না দাঁড়াতে পারলে দেশ মহাবিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে বলেও মনে করেন তিনি। 'ছাত্রলীগ ফাউন্ডেশন' গঠন করেছেন। জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকলেও এই মঞ্চে সবাইকে নিয়ে সরকার ও বিরোধী দল উভয়কে সতর্ক করছেন। সাবেক ছাত্রলীগারদের মতো নূরে আলম সিদ্দিকীও কমিউনিস্টদের হাত থেকে বাঁচাতে চান আওয়ামী লীগকে। ষাটের দশকেই আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রলীগের সামনের কাতারে। দীর্ঘ জেলজীবনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কেটেছে ১৭ মাসের একান্ত সানি্নধ্য। তার বক্তৃতা সারা দেশের ছাত্রসমাজকে উদ্বেলিতই করত না, মানুষকে জাগাত। উত্তাল ঢেউ উঠত জনসমুদ্রে। তার অপেক্ষায় থাকত পল্টন, বটতলা। নূরে আলম সিদ্দকী ছাত্ররাজনীতি থেকেই প্রবল আত্মপ্রত্যয়ী। তিনি ছাত্রলীগের সভাপতি হলে ইতিহাসের দরজা খুলে যায় তার সামনে। ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ, ডাকসু ভিপি আ স ম আবদুর রব ও জিএস আবদুল কুদ্দুস মাখনের সমন্বয়ে 'স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ' গঠিত হলে নূরে আলম সিদ্দিকী তার শীর্ষস্থানটি দখল করেন ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে।

তিয়াত্তরে 'ভিয়েতনাম দিবসে' ডাকসু ভবনে কমিউনিস্টদের সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর ছবিতে গুলি, তার প্রতিকৃতিতে আগুনের ফুলকি ওড়ার খবর পেয়ে মস্কোপন্থি ন্যাপ-ছাত্র ইউনিয়নের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন। হুঙ্কারের বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। সেদিনের সেই দুঃসহ স্মৃতির কথা শেখ হাসিনার মনে না পড়লেও ভুলতে পারেননি নূরে আলম সিদ্দিকী। বললেন, সেদিন মস্কোপন্থিরা বঙ্গবন্ধুর ছবিতে আগুন দিয়ে কী কটূক্তি করেছিলেন, তা মতিয়া চৌধুরীর চেয়ে কেউ ভালো বলতে পারবেন না। কারণ তিনি নিজেই পল্টন ময়দানে উন্মুক্ত সমাবেশে ঘোষণা দিয়েছিলেন 'শেখ মুজিবের চামড়া দিয়া ঢোল আর হাড্ডি দিয়া ডুগডুগি' বানানোর। জিয়ার খাল কাটা কর্মসূচির ভূয়সী প্রশংসায় মশগুল হয়ে ছুটে গিয়েছিলেন জিয়ার পাশে কোদাল হাতে। এখন সেই মস্কোপন্থিরাই আওয়ামী লীগকে গ্রাস করেছে।

তিনি তাগিদ দিয়েছেন প্রবীণ নেতাদের বসে না থেকে আওয়ামী লীগকে বাঁচানোর। বলেছেন কমিউনিস্টদের খপ্পর থেকে শেখ হাসিনাকে মুক্ত করার কথা। আর সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের গালে হাত দিয়ে বসে থাকায় বিস্মিতও হয়েছেন অনেকটা। তুলাধোনা করেছেন মস্কোপন্থি মতিয়া গংকে। ওদের আওয়ামী লীগে ঠাঁই নেওয়াকে অভিহিত করেছেন 'অনুপ্রবেশকারী' হিসেবে। কিছুটা আক্ষেপ রয়েছে প্রবীণ নেতাদের দায়িত্বহীনতায়। তাই তিনি নাম উল্লেখ করে বলেছেন, আমু, রাজ্জাক, তোফায়েল, জলিলদের সঙ্গে কাদের, মান্না, আখতার, জালাল, জাহাঙ্গীর, মান্নান, সুলতানদের সাহস করে মেরুদণ্ড খাড়া করে শেখ হাসিনার সামনে দাঁড়ানো উচিত। তারা মুখ বন্ধ করে থাকার কারণেই শেখ হাসিনাকে ভুল বোঝাচ্ছেন। নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, আওয়ামী লীগ বিলুপ্ত করে 'বাকশাল' গঠনে যারা বঙ্গবন্ধুকে বিভ্রান্ত করেছিলেন সেই কমিউনিস্টরাই ফুলেফেঁপে শেখ হাসিনার হয়ে উঠেছেন। বঙ্গবন্ধুকে দিয়ে যা তারা পারেননি, তা শেখ হাসিনাকে দিয়ে পারছেন। আওয়ামী লীগ বাকশাল হলেও বঙ্গবন্ধুর সেই একদলীয় মন্ত্রিসভায় তাও প্রতিমন্ত্রী পদে কমিউনিস্ট মুখ ছিল মাত্র একটি (মস্কোপন্থি ন্যাপের সৈয়দ আলতাফ হোসেন), কিন্তু শেখ হাসিনার বর্তমান মন্ত্রিসভায় কমিউনিস্টদেরই আধিক্য শুধু নয়, সরকারের সব পর্যায়েই তারা আধিপত্য বিস্তার করেছেন। দেশবাসী জানে আমু, রাজ্জাক, তোফায়েল, জলিলদের ইতিহাস-ঐতিহ্য। তার পরও কোনো মূল্যায়ন হয় না। তবুও তাদের উচিত মাথা তুলে মেরুদণ্ড সোজা করে নেত্রীর (শেখ হাসিনা) সামনে দাঁড়িয়ে সাদাকে সাদা ও কালোকে কালো বলা। কারণ নৌকা ডুবলে তাদেরও অস্তিত্ব থাকবে না। গাছাড়া ভাব দিয়ে বলছেন কেন? হাজার হাজার কর্মীর প্রত্যাশা আপনাদের কাছে। দায়দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। তিনি বলেন, আমার ব্যক্তিগত কোনো রাজনৈতিক আকাক্সক্ষা বা চাওয়া-পাওয়ার অভিলাষ নেই। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে শুধু দেখতে চাই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাস্তবায়ন। আবার কোনো কালো মেঘ দেশকে গ্রাস করুক তা চাই না। বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারিণীকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনম্র জানতে চেয়ে সিদ্দিকী বলেন, মন্ত্রীদের এত সমালোচনা হচ্ছে আর তিনি বলছেন সাফল্যের কথা। গত তিন বছরে মন্ত্রিসভার সদস্যরা যোগ্যতার বিন্দুমাত্র প্রমাণ দিতে না পারলেও তিনি কেন তাদের সাফাই গাইছেন? অবস্থা দেখে মনে হয় প্রধানমন্ত্রী বুঝতেই চেষ্টা করছেন না, তার সরকারের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে। আমি নিজে রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকলেও চাই না ভাটার টানে খালেদা জিয়ার জোয়ারে জনপ্রিয়তা সৃষ্টি করুক। এখনো সময় আছে ভুল শুধরে নিয়ে জনগণের হৃদয়ের উপলব্ধি বুঝতে চেষ্টা করুন। বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানি সংকট সমাধান ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করে বাজার স্থিতিশীল করুন। ভারতের সঙ্গে চুক্তি সংশয় মানুষের চিন্তাকে শঙ্কিত করে তুলছে, এ থেকে মুক্ত করুন।

বিরোধী দলকে সাদরে সংসদে যাওয়ার পথ করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, বিরোধী দলকে কথা বলার সুযোগ দিলে ক্ষতি নেই। তারা সংসদে না গেলে গণতন্ত্র ভিত্তিহীন হয়ে যাবে। সংসদ অকার্যকর হলে সরকারের গণতান্ত্রিক লেবাস থাকে না। ২৬২টি আসনের নেত্রীর সমালোচনায় শঙ্কা কেন? সমালোচনার মধ্য দিয়েই সমাধানের পথ বেরিয়ে আসে। দুই নেত্রীর ব্যবধান দেশকে আবারও সংঘাতের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার প্রতিও আহ্বান জানিয়ে সাবেক এ সংসদ সদস্য বলেন, জনগণই ক্ষমতার উৎস। লংমার্চ, রোডমার্চ আন্দোলন ক্ষমতায় যাওয়ার পথ নয়, সংসদে গিয়ে সরকারকে ধরুন। বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে সংসদ কী রকম প্রাণবন্ত ও সরগরম হয়ে উঠত তা বলে বোঝানো যাবে না। বঙ্গবন্ধু সমালোচনা সহ্য করতে পারতেন। কারণ তিনি জানতেন সমালোচনায় সমাধান বেরিয়ে আসে। তিনি বলেন, ছাত্রলীগ চরম ডান, চরম বাম ও মধ্যপন্থি বামের প্রতিহিংসা উপেক্ষা করে দৃপ্ত পদভারে সারা দেশে ছয় দফা যখন বাংলা ও বাঙালির মুক্তিতে দুর্জয় সংগ্রামে ব্যাপৃত তখন বাম রাজনীতির অগ্রভাগের নায়ক মশিউর রহমান যাদু মিয়া বঙ্গবন্ধুকে 'সিআইএর দালাল' ও 'ভারতের অনুচর' বলে ফাঁসি দাবি করেন। সেদিন মোজাফফর, মহীউদ্দীন, মতিয়া চৌধুরীরাও শেখ মুজিবকে 'ভারতের অনুচর' ও 'সিআইএর দালাল' বলে অকথ্য গালাগাল করেন। আমি বিস্মিত হলেও সত্য, বাংলাদেশের মস্কোপন্থি কমিউনিস্ট যারা তাত্তি্বকভাবে ক্রেমলিন-অনুগত ছিলেন, তারাই আজ অক্টোপাসের মতো আওয়ামী লীগকে গ্রাস করেছে। এরা মূল সমাজতন্ত্র থেকে আদর্শচ্যুত। এরা ক্ষমতাশ্রয়ী। গণমানুষের হৃদয়ে এরা কখনোই বাংলার মাটিতে শেকড় গাঁড়তে পারেননি। তাই আওয়ামী লীগকে সাপের বাঁধনে পেঁচিয়ে ধরে ক্ষমতাবান হয়েছেন।

আওয়ামী লীগের মতো বটবৃক্ষকে আজ বিলীন হওয়ার পথে নিয়ে আসা হচ্ছে। সরকার আওয়ামী লীগের, কিন্তু সরকারের নীতি গ্রহণের পরতে পরতে, প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আর রাজনীতিতে বামদের দুর্দমনীয় প্রভাব। তথাকথিত বাম রাজনীতিকরা নৌকার মূল সারথি। অথচ দেখা গেছে নৌকা প্রতীক ছাড়া তাদের কোনো আসনেই জামানত থাকে না। শেখ হাসিনাকে তারা বোঝাচ্ছেন, আপনার নৌকা এমন একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাঁধা, গ্রামবাংলার পরিমণ্ডলে আবৃত থাকার আর কোনো প্রয়োজন নেই। নিরন্ন, দুঃখ-দুর্দশায় জর্জরিত অসহায় মানুষের নেতা নন, দিগন্তবিস্তৃত আকাশে হংসতারার মতো উড়ে যান। আপনি নোবেল বিজয়ী হবেন, আপনার জনপ্রিয়তা স্পর্শ করার ক্ষমতা কারও নেই। খালেদা জিয়ার চেয়েও ঘরের শত্রু বিভীষণ। এমনদের সম্পর্কে কটূক্তি করা হচ্ছে যারা তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন আওয়ামী লীগকে। যারা এ দেশে বঙ্গবন্ধুকে এককভাবে প্রতিষ্ঠিত করলেন তাদের এই তথাকথিত বামরা ভিটেছাড়াই শুধু করেননি, আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতৃত্ব ও ছাত্রলীগের অতীত ঐতিহ্য প্রায় মুছে ফেলেছেন। বর্তমান নেতৃত্বকে সুপরিকল্পিতভাবে মূল্যবোধের অবক্ষয়ে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এটা বেদনার, এটা লজ্জার। বঙ্গবন্ধুকন্যাকেই তা ভাবতে হবে।

0 comments:

Post a Comment