শব্দদূষণে অসহনীয় হয়ে উঠেছে রাজধানীর জনজীবন। গাড়ির তীব্র হর্ন, মাইকের আওয়াজ, উচ্চমাত্রার মিউজিক আর নানা হুইসেলের শব্দে নগরবাসীর ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। আইন উপেক্ষা করে যানবাহনগুলোতে অবাধে ব্যবহৃত হচ্ছে হাইড্রোলিক হর্ন। যানজটে অবরুদ্ধ থাকাবস্থায় বা মধ্যরাতের ফাঁকা রাস্তায়ও অবিরাম বেজে চলে অ্যাম্বুলেন্সের হুইসেল। আবাসিক এলাকার পাশেই গড়ে তোলা কলকারখানার শব্দে আঁতকে উঠতে হয় ঘুমন্ত মানুষকে। বিদ্যুৎ সমস্যা থেকে রক্ষায় মহল্লায় মহল্লায় বসানো উচ্চ ক্ষমতার জেনারেটরের বিরক্তিকর শব্দও আরেক যন্ত্রণাময় পরিবেশের সৃষ্টি করে। এ অবস্থায় শুধু 'সতর্ক' করেই পরিবেশ অধিদফতর তার দায়িত্ব শেষ করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
উচ্চমাত্রার শব্দে রক্তচাপ, মাথাব্যথা, বদহজম, পেপটিক আলসার, কম শোনা, হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। শব্দদূষণ রোধে আইন প্রণীত হলেও তা বাস্তবায়নের সামর্থ্য নেই পরিবেশ অধিদফতরের। মহাপরিচালকসহ অধিদফতরের দায়িত্বশীল সবার একই কথা, 'জনবল কম থাকায় অনেক কিছুই করা সম্ভব হচ্ছে না।'
পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালায় 'নীরব', 'আবাসিক', 'মিশ্র', 'বাণিজ্যিক' ও 'শিল্প' হিসেবে পাঁচটি 'পৃথক এলাকা' নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব এলাকায় শব্দের সহনীয় মাত্রাও আলাদা আলাদাভাবে নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। নীরব এলাকায় শব্দের নির্ধারিত মাত্রা হচ্ছে দিনে ৪৫ এবং রাতে ৩৫ ডেসিবল। আবাসিক এলাকায় এ মাত্রা দিনে ৫০ ও রাতে ৪০ ডেসিবল। আইন অনুযায়ী হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নির্ধারিত কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ মিটার দূরত্ব পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। সেখানে গাড়ির হর্ন বা মাইকিং সম্পূর্ণ নিষেধ। অথচ সেসব স্থানে শব্দের মাত্রা ৮০-৮৫ ডেসিবলেরও বেশি থাকছে হরহামেশা। শব্দ সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা অমান্য করা যে শাস্তিযোগ্য অপরাধ, সে তথ্যটিও জানা নেই অনেকের।
শব্দের উৎস্য : সচেতনতার অভাব এবং সঠিকভাবে আইন বাস্তবায়ন না করার কারণেই শব্দদূষণ দিন দিন বাড়ছে বলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা যায়, গাড়ির হর্ন শব্দদূষণের প্রধান উৎস্য। এ ছাড়া ৬১ শতাংশ মাইকিং, ৪৫ শতাংশ মোটরগাড়ি, ৩৫ শতাংশ কলকারখানা, ১৯ শতাংশ ইট ভাঙার মেশিন, ১৩ শতাংশ সমাবেশ এবং চার শতাংশ অন্যান্য কারণে অতিশব্দের সূত্রপাত ঘটে। গাড়ির তীব্র হর্ন বেশ বিরক্তিকর। তবুও চালকরা প্রতিনিয়ত তীব্র হর্ন বাজিয়েই গাড়ি চালান। অনেকে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করেন, যা কানের জন্য খুবই মারাত্মক।
১২ দূষণে ৩০ রোগ : বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফ সূত্রে বলা হয়, উচ্চ শব্দসহ ১২ ধরনের দূষণ ৩০টি কঠিন রোগ সৃষ্টি করছে। কার্ডিওলজিস্ট ডা. বিপ্লব ভট্টাচার্য বলেন, 'গাড়ির হর্ন, বোমা বিস্ফোরণ বা যে কোনো ধরনের উচ্চশব্দ হৃদরোগীর জন্য খুবই ক্ষতিকর। মাত্রারিক্ত শব্দের কারণে মানুষের করোনারি হার্ট ডিজিজও হতে পারে। ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশের এক জরিপে শব্দদূষণের প্রভাব সম্পর্কে বলা হয়, অতিশব্দের কারণে বিরক্তবোধ, মাথাধরা, মেজাজ খারাপ হওয়া, মনসংযোগের সমস্যা, ঘুমের ব্যাঘাত এবং কম শোনার ঘটনা ঘটছে। চিকিৎসকদের মতে, শব্দদূষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা।
আইন আছে, প্রয়োগ নেই : শব্দদূষণ আইন নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন ধরনের আইন থাকলেও তা প্রয়োগ হচ্ছে না। শব্দদূষণের অপরাধে প্রথমবারের মতো তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা দুই হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে। দ্বিতীয়বারের অপরাধে ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার বিধান আছে। মোটরযান অধ্যাদেশেও অনেক ধারা রয়েছে। কিন্তু তার বেশিরভাগই প্রয়োগ হচ্ছে না। অধিদফতর শুধু 'সতর্ক' করে : শব্দদূষণ রোধে পরিবেশ অধিদফতর কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে কয়েক দফা ঘোষণা দিয়েও তা কার্যকর করতে পারেনি। অধিদফতর থেকে বলা হয়, মোবাইল কোর্ট ও ট্রাফিক পুলিশের মাধ্যমে শব্দদূষণ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মনোয়ার ইসলাম নিজেও শব্দদূষণকে 'নীরব ঘাতক' হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, জনবলসহ নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সব ধরনের পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে অধিদফতর ভূমিকা রাখছে। পরিবেশ এনফোর্সমেন্ট বিভাগ সূত্র জানায়, সম্প্রতি গুলশানের নিকেতন আবাসিক এলাকায় উচ্চ ক্ষমতার জেনারেটরের মাধ্যমে শব্দদূষণের অভিযোগে একটি ব্যাংককে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একইভাবে লালমাটিয়ায় ওয়াসা অফিস চত্বরে সার্বক্ষণিক জেনারেটর চালু রেখে বিকট শব্দ সৃষ্টির দায়ে ওয়াসার এমডিসহ কর্মকর্তাদের সতর্ক করা হয়েছে। এনফোর্সমেন্ট বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী বলেন, 'শব্দদূষণের ব্যাপারে অভিযোগ পেলে তৎক্ষণাত সরেজমিনে তদন্তসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে সচেতনতাই সবচেয়ে বেশি জরুরি।'
উচ্চমাত্রার শব্দে রক্তচাপ, মাথাব্যথা, বদহজম, পেপটিক আলসার, কম শোনা, হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। শব্দদূষণ রোধে আইন প্রণীত হলেও তা বাস্তবায়নের সামর্থ্য নেই পরিবেশ অধিদফতরের। মহাপরিচালকসহ অধিদফতরের দায়িত্বশীল সবার একই কথা, 'জনবল কম থাকায় অনেক কিছুই করা সম্ভব হচ্ছে না।'
পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালায় 'নীরব', 'আবাসিক', 'মিশ্র', 'বাণিজ্যিক' ও 'শিল্প' হিসেবে পাঁচটি 'পৃথক এলাকা' নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব এলাকায় শব্দের সহনীয় মাত্রাও আলাদা আলাদাভাবে নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। নীরব এলাকায় শব্দের নির্ধারিত মাত্রা হচ্ছে দিনে ৪৫ এবং রাতে ৩৫ ডেসিবল। আবাসিক এলাকায় এ মাত্রা দিনে ৫০ ও রাতে ৪০ ডেসিবল। আইন অনুযায়ী হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নির্ধারিত কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ মিটার দূরত্ব পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। সেখানে গাড়ির হর্ন বা মাইকিং সম্পূর্ণ নিষেধ। অথচ সেসব স্থানে শব্দের মাত্রা ৮০-৮৫ ডেসিবলেরও বেশি থাকছে হরহামেশা। শব্দ সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা অমান্য করা যে শাস্তিযোগ্য অপরাধ, সে তথ্যটিও জানা নেই অনেকের।
শব্দের উৎস্য : সচেতনতার অভাব এবং সঠিকভাবে আইন বাস্তবায়ন না করার কারণেই শব্দদূষণ দিন দিন বাড়ছে বলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা যায়, গাড়ির হর্ন শব্দদূষণের প্রধান উৎস্য। এ ছাড়া ৬১ শতাংশ মাইকিং, ৪৫ শতাংশ মোটরগাড়ি, ৩৫ শতাংশ কলকারখানা, ১৯ শতাংশ ইট ভাঙার মেশিন, ১৩ শতাংশ সমাবেশ এবং চার শতাংশ অন্যান্য কারণে অতিশব্দের সূত্রপাত ঘটে। গাড়ির তীব্র হর্ন বেশ বিরক্তিকর। তবুও চালকরা প্রতিনিয়ত তীব্র হর্ন বাজিয়েই গাড়ি চালান। অনেকে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করেন, যা কানের জন্য খুবই মারাত্মক।
১২ দূষণে ৩০ রোগ : বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফ সূত্রে বলা হয়, উচ্চ শব্দসহ ১২ ধরনের দূষণ ৩০টি কঠিন রোগ সৃষ্টি করছে। কার্ডিওলজিস্ট ডা. বিপ্লব ভট্টাচার্য বলেন, 'গাড়ির হর্ন, বোমা বিস্ফোরণ বা যে কোনো ধরনের উচ্চশব্দ হৃদরোগীর জন্য খুবই ক্ষতিকর। মাত্রারিক্ত শব্দের কারণে মানুষের করোনারি হার্ট ডিজিজও হতে পারে। ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশের এক জরিপে শব্দদূষণের প্রভাব সম্পর্কে বলা হয়, অতিশব্দের কারণে বিরক্তবোধ, মাথাধরা, মেজাজ খারাপ হওয়া, মনসংযোগের সমস্যা, ঘুমের ব্যাঘাত এবং কম শোনার ঘটনা ঘটছে। চিকিৎসকদের মতে, শব্দদূষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা।
আইন আছে, প্রয়োগ নেই : শব্দদূষণ আইন নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন ধরনের আইন থাকলেও তা প্রয়োগ হচ্ছে না। শব্দদূষণের অপরাধে প্রথমবারের মতো তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা দুই হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে। দ্বিতীয়বারের অপরাধে ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার বিধান আছে। মোটরযান অধ্যাদেশেও অনেক ধারা রয়েছে। কিন্তু তার বেশিরভাগই প্রয়োগ হচ্ছে না। অধিদফতর শুধু 'সতর্ক' করে : শব্দদূষণ রোধে পরিবেশ অধিদফতর কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে কয়েক দফা ঘোষণা দিয়েও তা কার্যকর করতে পারেনি। অধিদফতর থেকে বলা হয়, মোবাইল কোর্ট ও ট্রাফিক পুলিশের মাধ্যমে শব্দদূষণ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মনোয়ার ইসলাম নিজেও শব্দদূষণকে 'নীরব ঘাতক' হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, জনবলসহ নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সব ধরনের পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে অধিদফতর ভূমিকা রাখছে। পরিবেশ এনফোর্সমেন্ট বিভাগ সূত্র জানায়, সম্প্রতি গুলশানের নিকেতন আবাসিক এলাকায় উচ্চ ক্ষমতার জেনারেটরের মাধ্যমে শব্দদূষণের অভিযোগে একটি ব্যাংককে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একইভাবে লালমাটিয়ায় ওয়াসা অফিস চত্বরে সার্বক্ষণিক জেনারেটর চালু রেখে বিকট শব্দ সৃষ্টির দায়ে ওয়াসার এমডিসহ কর্মকর্তাদের সতর্ক করা হয়েছে। এনফোর্সমেন্ট বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী বলেন, 'শব্দদূষণের ব্যাপারে অভিযোগ পেলে তৎক্ষণাত সরেজমিনে তদন্তসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে সচেতনতাই সবচেয়ে বেশি জরুরি।'
0 comments:
Post a Comment