SPORTS JOBS 7WONDERS

Ads by Cash-71

সরকার পতন না ঘটিয়ে ফিরবো না সিলেটের জনসমুদ্রে বেগম খালেদা জিয়ার ঘোষণা

Posted by methun

সরকারবিরোধী রোডমার্চ শেষে পুণ্যভূমি সিলেটের জনসমুদ্রের মঞ্চ কাঁপিয়ে মহাজোট সরকারের পতনের ডাক দিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেছেন, আগে বলেছিলাম স্বৈরাচারী সরকারের পতন না ঘটিয়ে ঘরে ফিরব না। স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছি। আজ বলছি এই অত্যাচারী সরকারকে বিদায় না করে ঘরে ফিরব না। আপনারা আগামী দিনের আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিন। তিনি জোরালো কণ্ঠে বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি, এ সরকার যদি দেশবিরোধী কোনো চুক্তি বাস্তবায়ন করে তাঁবেদার রাষ্ট্র বানাতে চায় তবে আমাদের আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ করতে হবে। এ যুদ্ধে আমি আপনাদের পাশে থাকব। বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, এই পুণ্যভূমি সিলেট থেকে অনেক আন্দোলনের সূচনা হয়েছে। দেশের মাটি ও সীমান্তের গ্রাম রক্ষায় ভূমিকা রাখার জন্য তিনি সিলেটবাসীকে সালাম জানান। তিনি বলেন, জনগণ ভালো নেই, ভালো আছে সরকারদলীয় মন্ত্রী-এমপি-নেতারা। দুর্নীতির টাকায় তারা চার বেলায় ভাত খান। সোমবার রোডমার্চ করে খালেদা জিয়া সিলেটে আসেন। গতকাল বিকালে আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানের জনসমুদ্রে ৫২ মিনিটের বক্তৃতায় এ কথা বলেন তিনি। বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা সভাপতি এম ইলিয়াস আলীর সভাপতিত্বে সমাবেশে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল অলি আহমদ, জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, ইসলামী ঐক্যজোটের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মাওলানা আবদুর রকীব, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস, জামায়াতের সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ প্রমুখ নেতা বক্তব্য রাখেন।

এ ছাড়া বিএনপি নেতাদের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মাহবুবুর রহমান, তরিকুল ইসলাম, আ স ম হান্নান শাহ, এম কে আনোয়ার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সহসভাপতি শমসের মবিন চৌধুরী, ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকা, যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান, যুবদলের সাবেক সহসভাপতি কাইয়ুম চৌধুরী, সুজাত মিয়া এমপি, সাবেক এমপি খালেদা রব্বানী, শফি আহমেদ চৌধুরী, কলিমউদ্দিন মিলন, নাসিরউদ্দিন চৌধুরী, শাম্মী আক্তার এমপি, দিলদার হোসেন সেলিম, শাহীনূর পাশা, মুশফিকুল ফজল আনসারী, মহানগর বিএনপি সভাপতি এম এ হকসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। জনসভা পরিচালনা করেন সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম জালালী পংকী, জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আহমেদ ও মহানগর সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল হাসান কয়েস লোদী।

জনসভার স্লোগান : গতকাল সিলেটের বিশাল জনসভার মূল স্লোগান ছিল 'শেখ হাসিনার দিন শেষ, খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ'। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে জনসভা অভিমুখে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল আসতে শুরু করে। এসব মিছিলে বিভিন্ন রঙের ব্যানার হাতে দলীয় নেতা-কর্মীরা 'খালেদা জিয়া এগিয়ে চল, আমরা আছি তোমার সাথে' 'তারেক রহমান আসবে দেশে, বীরের বেশে', 'এই মুহূর্তে দরকার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার' ইত্যাদি স্ল্লোগানে মুখরিত করে তোলে। মিছিল ও ব্যান্ড সংগীতের মূর্ছনায় পুরো শহর উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়। সিলেট মহানগর ছাড়াও হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ জেলা থেকে বিএনপিসহ চারদলের নেতা-কর্মীরা বাস-ট্রাকে করে এই জনসভায় যোগ দেন। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, জামালপুর, বরিশাল, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, খুলনা, যশোরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে সোমবার রাতে আসা রোডমার্চের গাড়িবহরে নেতা-কর্মীরা জনসভায় অংশ নেন। রোডমার্চে আসা দলীয় নেতা-কর্মীরা আগের রাতে সিলেটের শতাধিক আবাসিক হোটেল, কমিউনিটি সেন্টারসহ বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের বাড়ি রাতযাপন করেন। অনেকে রাতে এবং সকালে হজরত শাহজালাল ও শাহপরানের (রহ.) মাজার জিয়ারত করেন। পুরো শহরের প্রধান সড়কগুলোয় বেলা ২টার পর থেকে মিছিলের কারণে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিশেষ করে বন্দর সড়ক, আম্বরখানা, দরগা রোড, হাসপাতাল রোড, চৌহাট্টা প্রভৃতি সড়কে ছিল কেবল মিছিল আর মিছিল। জনসভায় নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি মহিলাদের উপস্থিতিও ছিল ব্যাপক।

মঞ্চ ও আশপাশে ছিল ব্যাপক নিরাপত্তা : চারদলীয় জোটের উদ্যোগে জনসভায় মঞ্চের চারপাশে বসানো হয় সিসিটিভি ক্যামেরা। পুলিশ, র‌্যাব ও আইনশৃক্সখলা বাহিনীর সদস্যরা সোমবার থেকে জনসভাস্থলটিকে নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্যে নিয়ে আসেন। পুলিশের পাশাপাশি বিএনপিও নিয়োগ করে দেড় হাজার স্বেচ্ছাসেবক। আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের পশ্চিম পাশে নির্মাণ করা হয় বিশাল মঞ্চ। মঞ্চে টানানো ব্যানারে খালেদা জিয়ার বিশাল প্রতিকৃতির পাশেই ছিল শহীদ জিয়া ও তারেক রহমানের প্রতিকৃতি। মূলমঞ্চে চার দলের শীর্ষ নেতা, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিসহ সমমনা দলের নেতারা বসেন। মঞ্চের নিচে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত চার দলের নেতা ও সাংবাদিকদের জন্য আসন নির্ধারণ করা ছিল। জনসভা উপলক্ষে পুরো শহরে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে তৈরি করা হয় শতাধিক তোরণ। এসব তোরণে তারেক রহমানের হাত নাড়ানো ছবিও স্থান পায়।

যানজট ও জনদুর্ভোগ : সিলেটের এই বিশাল জনসভার কারণে দুপুরের পর থেকেই প্রধান প্রধান সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। শহরের প্রবেশদ্বার সুরমা কিন ব্রিজ, শাহজালাল সেতু সড়ক, বন্দর বাজার, এয়ারপোর্ট রোড, তাবাবিল সড়ক ও সুনামগঞ্জ সড়কে যানজটের কারণে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পর এটি ছিল সিলেটে বেগম জিয়ার প্রথম জনসভা। এ জন্য তার বক্তব্য শুনতে ব্যাপক লোকসমাগম ঘটে। বিএনপি চেয়ারপারসন পরিষ্কার ভাষায় বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হতে হবে। আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি বলেন, যদি শান্তি চান তবে জনদাবি মেনে নিন। আলোচনার মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের মাধ্যমে নির্বাচন দিন। বেশি দেরি করলে এরও সময় পাবেন না। জনগণের ধাক্কায় পড়ে যাবেন। বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে আজ্ঞাবহ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এ ধরনের কমিশন মানি না। এ কমিশন বাতিল করে সব দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করুন। ইভিএম পদ্ধতিকে ভোট চুরির নতুন কৌশল আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, অনেক দেশ এ পদ্ধতি চালু করে পরে তা বাতিল করে।

বেগম জিয়া বলেন, আমরা ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী মনে করি না। আমরা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করব। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, দেশের মানুষ ভালো নেই। সরকার সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। জনগণের আজ নাভিশ্বাস উঠেছে। ভালো আছেন শুধু সরকারের মন্ত্রী-এমপি আর দলীয় নেতারা। তারা দুর্নীতির টাকা দিয়ে এখন চার বেলা করে ভাত খান। সরকারকে আপাদমস্তক 'দুর্নীতিগ্রস্ত' আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এ সরকার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দুর্নীতিতে ডুবে আছে। দুর্নীতির কারণেই পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সেতু নির্মাণের আগেই অর্থ লুটপাটের মাধ্যমে নির্মাণকাজ বিঘি্নত করেছে সরকার। বিশ্বব্যাংক এতে শুধু অর্থায়নই বন্ধ করেনি, দুর্র্নীতির তদন্তও শুরু করেছে। সরকার পতনের আন্দোলনে সবাইকে শরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, এ সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে। '৭৪-এর দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। মানুষকে না খেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরতে হবে। তাই আন্দোলনের মাধ্যমে এদের ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দেশকে বাঁচাতে হবে।

বেগম জিয়া আরও বলেন, ভোটের জন্য নয়, তাঁবেদার জুলুমবাজ সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্য রাস্তায় নেমেছি। রোডমার্চের পর কঠোর কর্মসূচি দেব। আপনারা দেশরক্ষার এ আন্দোলনে অংশ নেবেন। সুদিন আপনাদের অবশ্যই আসবে এবং বিজয় আপনাদের সনি্নকটে। সরকারের ব্যর্থতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, গত তিন বছরে সরকার একটি প্রতিশ্রুতিও বাস্তবায়ন করতে পারেনি। তারা দেশের অনেক ক্ষতি করেছে। অর্থনীতিকে পঙ্গু করেছে। আইনশৃক্সখলার অবনতির উল্লেখ করে তিনি বলেন, খুন, গুম, রাহাজানি এখন নিত্যদিনের ঘটনা। মানুষ স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাচ্ছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের চরিত্রই হলো এটা। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়েও লাল ও নীল বাহিনী গঠন করে তারা ৪০ হাজার রাজনৈতিক কর্মী হত্যা করেছিল।

মানবতাবিরোধী এ কর্মকাণ্ডেরও বিচার হওয়া দরকার। আগে তারা বলেছিল ট্রানজিট দিলে বাংলাদেশ ও দেশের জনগণ অনেক কিছুই পাবে। ট্রানজিটের নামে তারা পাশের দেশকে করিডর দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ কিছুই পায়নি, বরং উল্টো পাশের দেশের ব্যবসায়ীরা বিনাশুল্কে জাহাজ ভরে মালামাল নিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের ওপর দিয়ে। তিনি বলেন, দেশের জনগণের চলাচলের জন্য রাস্তাঘাট মেরামত করা হয় না। অথচ কোটি কোটি টাকা খরচ করে পাশের দেশের যানবাহন চলাচলের জন্য রাস্তা ঠিক করা হচ্ছে।

সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস তুলে নেওয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, তাদের (সরকারের) আল্লাহর ওপর কোনো বিশ্বাস নেই। তাদের বিশ্বাস হচ্ছে মা দুর্গার ওপর। এ জন্য তারা সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস তুলে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কোন্ ধর্মে বিশ্বাস করেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। পূজামণ্ডপে গিয়ে তিনি বলেছেন, আমাদের মা দুর্গা গজে এসেছেন।




0 comments:

Post a Comment