SPORTS JOBS 7WONDERS

Ads by Cash-71

জিলাপি চানাচুরে মবিল মাছ দুধে ফরমালিন

Posted by methun

মাছেও ফরমালিন, দুধেও ফরমালিন, ফল-ফলাদিতে দেওয়া হচ্ছে কার্বাইডসহ নানা বিষাক্ত কেমিক্যাল। সবজিতে রাসায়নিক কীটনাশক, জিলাপি-চানাচুরে মবিল, বিস্কুট, আইসক্রিম, কোল্ডড্রিংস, জুস, সেমাই, আচার, নুডুলস এবং মিষ্টিতে টেক্সটাইল-লেদারের রঙ, মুড়িতে ইউরিয়া-হাইড্রোজ, পানিতে থাকছে আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম-লেড-ইকোলাই। শিশুখাদ্য গুঁড়োদুধও ভেজালমুক্ত রাখা যাচ্ছে না। অতিরিক্ত রেডিয়েশনযুক্ত গুঁড়োদুধ আমদানি হচ্ছে দেদার, সয়লাব হয়ে আছে হাটবাজার। আইসক্রিম, মিষ্টিসহ অনেক পণ্যেই চিনির পরিবর্তে অহরহ ব্যবহার হচ্ছে সোডিয়াম সাইক্লাইমেট। কাউন ও কাঠের গুঁড়া মিশিয়ে মশলা তৈরি করা হয়। এভাবেই নানা কৃত্তিমতায় খাদ্যদ্রব্যাদি যেমন ভেজাল ও বিষে পরিণত করা হচ্ছে, তেমনি সেসব হয়ে পড়ছে স্বাদ-গন্ধহীন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফরমালিন উচ্চমাত্রার বিষাক্ত পদার্থ। এর কারণে দ্রুত কিডনি নষ্ট, ক্যান্সার, লিভারব্যাধি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। শিশুদের হার্টের রোগ হতে ও দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে। গর্ভজাত মায়ের শিশুও বিকলাঙ্গ হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়।

দুধ-মাছ থেকে শুরু করে ফলমূল পর্যন্ত বেশির ভাগ খাদ্যদ্রব্যে যে বিপজ্জনক রাসায়নিক সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় তা হলো ফরমালিন-কার্বাইড। দামে সস্তা ও সহজলভ্য হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ফল পাকানোর কাজে কার্বাইডের যথেচ্ছ ব্যবহার করেন। ১ কেজি ক্যালসিয়াম কার্বাইডের মূল্য ৬০-৭০ টাকা মাত্র, যা দিয়ে ১০ টন ফল পাকানো সম্ভব। তবে ব্যবসায়ীরা সাধারণত ৫০ কেজি ফলের জন্য ১০০ গ্রাম ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করেন। এতসব কীটনাশক, ফরমালিন, কার্বাইডসহ নানা রাসায়নিক পদার্থে বিষাক্ত হয়ে পড়া মাছকে ঘিরে কোনো মাছির আনাগোনা দেখা যায় না, রসে টইটম্বুর ফলমূল ঘিরে থাকে না মৌমাছির গুঞ্জন। বাস্তবে ফরমালিনের মতো ভয়াবহ ক্ষতিকর কিছুর ধারেকাছেও মাছি-মৌমাছি যায় না। শাকসবজিসহ বিভিন্ন কৃষিজাত পণ্য উৎপন্নে অনিয়ন্ত্রিতভাবে রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার বাড়ছে, যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। দেশের সর্বত্র সবজিবাগানে বিভিন্ন রাসায়নিক কীট ও বালাইনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। কীটনাশকের মধ্যে রিনকর্ড, সিমবুন, সুমিসাইডিন, হেপ্টাক্লোর, থায়াডিন, ডিডিটি ইত্যাদি বেশি বিপজ্জনক। অন্যদিকে নগস, সুমিথিয়ন, ডাইমেক্রন, ম্যালালাথিয়ন, অ্যারোম্যাল ইত্যাদি মানবদেহে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতি করে থাকে। এতে ভোক্তারা বাজারে পাচ্ছেন বিষাক্ত শাকসবজি।

খাদ্যে ভেজাল মেশানো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাল, আটা, লবণ, চিনি, ভোজ্যতেল, আলু, দুধ থেকে শুরু করে রুটি, কেক, মিষ্টি, বিস্কুট কিছুই ভেজালের ছোবল থেকে বাদ যায় না। খাদ্যে রঙের ব্যবহারও চলছে বিপজ্জনকভাবে। মহাখালী পাবলিক হেলথ ইনস্টিটিউটের খাদ্য পরীক্ষাগারের তথ্যানুযায়ী দেশের ৪৫ ভাগ এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের তথ্যানুযায়ী দেশের ৫৪ ভাগ খাবারে ভেজাল। এসব খাদ্যদ্রব্য মৌসুমের আগেই বিক্রিযোগ্য করতে এবং দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন কেমিক্যাল মেশানো হয়।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের এক গবেষণাসূত্রে জানা যায়, শুধু ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ লোক ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা দেড় লাখ, কিডনি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ। এ ছাড়া গর্ভবতী মায়ের শারীরিক জটিলতাসহ গর্ভজাত বিকলাঙ্গ শিশুর সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। বিষাক্ত ও ভেজাল খাদ্য প্রতিরোধ আন্দোলনকারী সংগঠন 'পরিবেশ বাঁচাও'-এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, 'বিষাক্ত খাদ্যপণ্য রোধ করা না গেলে খুব শীঘ্রই দেশে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা ১০ থেকে ১২ ভাগে উন্নীত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।' তার মতে, যারা প্রতিনিয়ত খাবারে ভেজাল দিয়ে মানুষ হত্যা করে চলেছে, তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত মৃত্যুদণ্ড।

ভেজাল খাদ্যের তালিকা : বিষাক্ত সাইক্লোমেট দিয়ে তৈরি টোস্ট বিস্কুট, বিষাক্ত ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে পাকানো ফল (আম, কলা, আনারস ইত্যাদি), বিষাক্ত উপকরণ দিয়ে তৈরি রুটি, বিস্কুট, সেমাই, নুডলস, ক্ষতিকর রঙ দেওয়া ডিম, মেয়াদোত্তীর্ণ আইসক্রিম, বিভিন্ন রকম মিষ্টান্ন, ডিডিটি দেওয়া শুঁটকি, ইউরেনিয়াম দেওয়া চাল, ক্ষতিকর ফরমালিন দেওয়া মাছ-সবজি, মবিল দিয়ে ভাজা চানাচুর, জিলাপি, ক্ষতিকর রঙ দেওয়া ডাল, ডালডা ও অপরিশোধিত পামওয়েলমিশ্রিত সয়াবিন তেল, ভেজালমিশ্রিত সরিষা তেল, রঙ ও ভেজালমিশ্রিত ঘি, পামওয়েলমিশ্রিত কনডেন্স মিল্ক, ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান দিয়ে তৈরি প্যাকেটজাত জুস, মিনারেল ওয়াটার, মরা মুরগির মাংস, গন্ধকের ধোঁয়া দেওয়া সুপারি, স্যাকারিন দেওয়া চা, রাসায়নিক পদার্থমিশ্রিত জর্দা, আয়োডিনবিহীন লবণ, ইউরিয়া সারের পানি দেওয়া চিঁড়া-মুড়ি। বিভিন্ন নাম না জানা কেমিক্যাল আর পিয়াজের রস মিশিয়ে তৈরি করা হয় ১ নম্বর খাঁটি সরিষার তেল। দুধে আটা, ময়দা, ভাতের মাড়, এরারুট মেশানো হয়। দুধের মধ্যে রাসায়নিক কেমিক্যাল ফরমালিন, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, বোরিক অ্যাসিড, স্যালিসাইলিক, ইউরিয়া, চিনি, লবণ, সোডিয়াম বেনজোয়েট, সোডিয়াম কার্বনেট, ফেভার, ক্ষতিকর রঙ, আলকাতরার রঙ, আটা-ময়দা, ভাতের মাড়, শ্বেতসার ও স্কিম মিল্ক পাউডার মিশ্রণ করে বাজারজাত করা হচ্ছে। মরিচের গুঁড়ায় ব্যবহার করা হয় রাসায়নিক রঙ ও ইটের গুঁড়ো।

0 comments:

Post a Comment