SPORTS JOBS 7WONDERS

Ads by Cash-71

নারায়ণগঞ্জে পরীক্ষায় ইভিএম

Posted by methun

বিরোধী দলের আপত্তির মধ্যেও ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। দেশে প্রথম নারায়ণগঞ্জে বড় পরিসরে এ পদ্ধতির ব্যবহার ইসির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

ব্যয় সাশ্রয়ী ও আধুনিক দাবি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আগে থেকেই ইভিএম বা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহারের ওপর জোর দিয়ে আসছে। সরকারের পক্ষ থেকেও মিলেছে সাড়া। তবে আপত্তিকারী বিএনপি বলছে, নির্বাচনে বড় ধরনের 'কারচুপির হাতিয়ার' হবে ইভিএম।

তবে আগামী সাধারণ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষপাতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ টি এম শামসুল হুদা বলছেন, ইভিএমে কারচুপি যেন না হয়, সে পদক্ষেপও নেওয়া আছে।

ইভিএম নিয়ে ইসি ও বিরোধী দলের মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন'র নির্বাহী সদস্য অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ সোমবার  বলেন, ইভিএম মেশিন নিয়ে কোনো ধরনের সন্দেহ না থাকলেও নয়টি ওয়ার্ডে একটু বড় পরিসরের নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় এবার ইসিকে পরীক্ষা দিতে হবে।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২৭ ওয়ার্ডের মধ্যে নয়টিতে বুয়েট প্রকৌশলীদের উদ্ভাবিত ইভিএম ব্যবহার হচ্ছে। এর আগে গত বছর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে একটি ওয়ার্ডের ১৪টি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার হয়েছিলো।

নারায়ণগঞ্জে বিরোধী দল সমর্থিত প্রার্থীসহ এক শ্রেণীর ভোটারদের ইভিএম নিয়ে সন্দেহ রয়েই গেছে- এ মন্তব্য করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে গঠিত স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণ কমিটির সদস্য তোফায়েল বলেন, "এখন ইসিকে সন্দেহ দূর করতে হবে। নির্বাচনী পরিবেশ ও যান্ত্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

"চট্টগ্রামে একটি ওয়ার্ডে ভালো হয়েছে, নয়টি ওয়ার্ডে হবে কি না, তাও দেখার বিষয়। এখানে কেউ দখল, কারচুপি, ছিনতাইয়ের ঘটনা যেন না ঘটে, তার পরীক্ষা দিতে হবে ইসিকে।"

নারায়ণগঞ্জে সফল হলে আগামী দিনে ইভিএমের গ্রহণযোগ্যতা আরো একধাপ এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন অধ্যাপক তোফায়েল।

ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য অনুযায়ী, ক্ষমতাসীন দলসহ অন্তত ৩০টি রাজনৈতিক দল স্থানীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত জানিয়েছে।

ইসিতে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৩৮টি হলেও বিএনপি এবং এর মিত্র দলগুলো ইভিএম নিয়ে সংলাপে যায়নি।

ইভিএমের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে সিইসি বলছেন, "নির্বাচনী ব্যবস্থাপনাকে সহজতর, ফল ঘোষণা দ্রুত, নির্বাচনোত্তর সহিংসতা কমানো, নির্বাচন পরিচালনা ব্যয় কমানো ও প্রশাসনিক জটিলতা কমানোসহ আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে ইভিএম'র এ উদ্যোগ।"

আগামী ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৭, ৮, ৯, ১৬, ১৭, ১৮, ২২, ২৩, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের মোট ৫৮ কেন্দ্রের ৪৫০টি বুথে একটি করে ইভিএম থাকছে। এসব ওয়ার্ডে ভোটার রয়েছে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৬২৯ জন।

গত বছরের জুনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডে ১৪টি ভোটকেন্দ্রের ৭৯টি ভোটকক্ষে একটি করে ইভিএম ব্যবহার করা হয়। এতে ভোটার ছিলেন ২৫ হাজার ২৩০ জন।

ইভিএম পদ্ধতি নতুন হওয়ায় নারায়ণগঞ্জে ১ হাজার ৪০০ জন ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা এর ব্যবহারবিধি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ভোটারদের সচেতন করতে কাজ করছে বলে ইসি জানায়।

আগামীতে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার চাইলেও সে পর্যন্ত বর্তমান কমিশন থাকছে না। সিইসি বলেছেন, তারা ইভিএমের প্রস্তুতি রেখে যাবেন, আগামী কমিশন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

ইভিএম যেভাবে ব্যবহার

নারায়ণগঞ্জে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইভিএম বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তত্ত্বাবধানে তৈরি করেছে গাজীপুরের রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি।

ইভিএম দুটি ইউনিট সমন্বয়ে গঠিত- একটি কন্ট্রোল ইউনিট ও অন্যটি ব্যালট ইউনিট। কন্ট্রোল ইউনিটটি ব্যালট দেওয়া এবং ব্যালট সংরক্ষণের কাজ করে। কন্ট্রোল ইউনিটটি মূলত কাগজের ব্যালট ও ব্যালট বাক্সকে প্রতিস্থাপিত করে। স্মার্ট কার্ড দিয়ে নিয়ন্ত্রিত এই ইউনিটটি সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

এখন যেমন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ব্যালট পেপার ইস্যু করে থাকেন, এক্ষেত্রেও তিনি ইলেকট্রনিক ব্যালট ইস্যু করবেন। কত জন ভোট দিচ্ছেন, তা ভোট দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যালট ইউনিটের সামনে স্থাপিত ডিসপ্লেতে প্রদর্শিত হতে থাকবে, যা সব পোলিং এজেন্ট ও নির্বাচন কাজে নিয়োজিত ও বুথে অবস্থানকারী অনুমোদিত ব্যক্তিরা দেখতে পাবে।

ব্যালট ইউনিটটি কন্ট্রোল ইউনিটের একটি তারের মাধ্যমে সংযুক্ত। ব্যালট ইউনিটে প্রার্থীদের নাম ও প্রতীক সম্বলিত একটি কাগজ লাগানো থাকে, আর প্রতিটি প্রতীকের পাশে একটি বোতাম থাকে।

কন্ট্রোল ইউনিট থেকে সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ব্যালট ইস্যু করলে একটি সবুজ সঙ্কেত উভয় ইউনিটে জ্বলে উঠবে এবং ভোটার বোতাম টিপে তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন। ভোটার তার পছন্দের প্রার্থীর প্রতীকের পাশের বোতামটি টিপলে একটা 'বিপ' শোনা যাবে। তা শুনে আর প্রতীকের পাশের বাতিটি জ্বলা দেখে ভোটার বুঝতে পারবেন, তার ভোট দেওয়া হয়েছে।

ইভিএমের বিরোধিতা

ইসির সংলাপে না নিলেও বিএনপি ও তাদের জোট শরিকরা বারবার ইভিএমের বিরোধিতা করে বলছে, কেউ চাইলে যন্ত্রটি দখলে নিয়ে একই ব্যক্তি একাধিক ভোট দিতে পারবে। ইভিএমের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও যথেষ্ট নয় বলে দাবি তাদের।

কয়েকটি দল বলছে, ইভিএমে মোট ভোট গণনা হলেও প্রতিটি ভোট সঠিক ব্যক্তির কাছে পড়লো কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়।

ভোটের আগে বা পরে ওই মেশিনে ভিন্ন সফটওয়্যার যোগ করে ফল পাল্টানোর সুযোগও থাকতে পারে বলে সন্দেহ তাদের।

এ বিষয়ে বুয়েটের আইআইসিটির পরিচালক অধ্যাপক লুৎফুল কবীর বলেন, "ইভিএমে কোনোভাবে কারচুপি সম্ভব নয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে অনুমোদিত ব্যক্তিরাই ভোট দেবেন। প্রতিটি ইভিএম স্বতন্ত্রভাবে পরিচালিত হয়।

"এছাড়া প্রার্থী, রাজনৈতিক দল ও ইসির কর্মকর্তাদের নিয়ে বিশেষ কমিটির সামনে ইভিএম'র সফটওয়্যার আপলোড করা হয় বলে তাতে বিভ্রান্ত হওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না।"

ইভিএম দখলের বিষয়ে সিইসি বলেন, "কেন্দ্র যদি দখল হয়ে যায়, কিংবা পোলিং স্টাফ এবং শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী যদি একজোট হয়ে ভোট কারচুপি করতে চায়, তবে ইভিএম কেন, কোনো ভাবেই তা ঠেকানো যাবে না।

"এ ধরনের অপকর্ম ভোটার ও নাগরিক সচেতনতা এবং সামাজিক প্রতিরোধই দূর করতে পারে।"

0 comments:

Post a Comment