বিএনপিসহ চার দলের ডাকা হরতাল কর্মসূচি চললেও দূরপাল্লার বাস এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা ছাড়া তার আর কোনো ছাপ দেখা যাচ্ছে না নগরজীবনে।
বৃহস্পতিবার হরতালে রাজপথে দেখা যায়নি হরতালকারীদের; যদিও বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, তাদের নামতে দেয়নি পুলিশ।
হরতালেও ট্রেন, লঞ্চ ও বিমান চলাচল স্বাভাবিক। নির্ধারিত সময়ে সচল হয়েছে পুঁজিবাজার, চলছে লেনদেন। উপস্থিতি স্বাভাবিকের চেয়ে কম হলেও অফিস-আদালত খুলেছে নির্ধারিত সময়েই।
জ্বালানি তেল ও সিএনজির দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এ হরতাল ডাকা হয়েছে। তবে সরকারি দলের দাবি, এ দাবির আড়ালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে হরতাল ডাকা হয়েছে।
হরতালের মধ্যেই সকাল থেকে রাজধানীর সড়কে বিআরটিসির পাশাপাশি ব্যক্তি মালিকানাধীন বাস চলতে দেখা যায়। কাউন্টারভিত্তিক বাসগুলো সকালে না দেখা গেলেও দুপুর ১২টা থেকে অনেক রুটে সে বাসগুলো চলাও শুরু হয়েছে।
সড়কে প্রাইভেট গাড়ি দেখা না গেলেও প্রচুর পরিমাণে অটো রিকশা ও রিকশা চলছে। যানজট না থাকায় যথাসময়ে অফিসে উপস্থিত হওয়ার কথাও জানিয়েছেন কয়েকজন।
ঢাকার সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে কুমিল্লার দাউদকান্দি অভিমুখে কয়েকটি বাস ছাড়তেও দেখা গেছে, যা আগের হরতালে দেখা যায়নি। তবে গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন জেলামুখী বাসগুলো ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি।
দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ট্রেনে বেশ ভিড় দেখা গেছে। সকালে এয়ারপোর্ট স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, প্রচুর যাত্রীর উপস্থিতি। ট্রেনগুলোও সময় মতো ছাড়তে দেখা গেছে।
সদরঘাট থেকে লঞ্চও চলাচল করছে, তবে যাত্রী সংখ্যা অন্য দিনের তুলনায় কম। বিমান চলাচল স্বাভাবিক বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ে হরতালের কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। সচিবালয় ঘুরে দেখা যায়, অন্যদিনের মতোই কার্যক্রম চলেছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতিও স্বাভাবিক।
কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, কর্মচারীদের বহনকারী সবগুলো বাস নির্ধারিত সময়ে সচিবালয়ের গেটে পৌঁছায়। প্রতিটি বাসে নিরাপত্তার জন্য চার জন করে পুলিশ ছিলো।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি স্বাভাবিক হলেও সচিবালয়ে দর্শনার্থী কম দেখা গেছে।
বেশির ভাগ মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যেই দপ্তরে উপস্থিত হন। নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যেই সচিবালয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অফিসে এসেছেন।
ঢাকায় হরতালকারীদের তৎপরতা দেখা না গেলেও সরকার সমর্থকরা হরতালবিরোধী মিছিল করেছে বিভিন্ন স্থানে।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া সাংবাদিকদের বলেছেন, "বিএনপি নেতারা হরতাল ডেকে বাসায় ঘুমাচ্ছেন।"
অন্যদিকে নয়া পল্টনে পুলিশের ঘেরাওয়ের মধ্যে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, "আমরা অবরুদ্ধ হয়ে আছি, পুলিশ আমাদের ঘিরে রেখেছে।"
তবে দেশবাসী স্বতস্ফূর্তভাবে হরতাল পালন করছে বলে দাবি করেন তিনি।
সংসদ ভবনের সামনে বিএনপির সংসদ সদস্যরা মিছিলের চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। পুরান ঢাকার কয়েকটি স্থানে বিএনপি নেতা-কর্মীরা ঝটিকা মিছিলের চেষ্টা করেও পুলিশের তৎপরতায় ব্যর্থ হয়।
পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজারে ছাত্রদলের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা-কর্মীরা মিছিলের চেষ্টা করেন। তবে পুলিশের ধাওয়ায় পালিয়ে ান তারা। সেখান থেকে রিপন নামে এক জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রমনা এলাকায় মিছিলের চেষ্টা করলে তিন জনকে গ্রেপ্তার করে শাহবাগ থানা পুলিশ। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রও রয়েছেন।
বিএনপির পাশাপাশি চারদলীয় জোটের অংশীদার জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) ও ইসলামী ঐক্যজোটও হরতাল ডাকলেও তাদের কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।
ঢাকার বাইরের জেলাগুলো থেকেও ঢিলেঢালা হরতালের খবর পাওয়া গেছে। বাস চলাচল না করলেও রাস্তায় অটো রিকশা, টেম্পু, রিকশা চলছে। দোকানপাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হলেও সরকারি অফিস-আদালতে কাজ চলছে।
আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর পল্টনে জনসভা থেকে খালেদা জিয়ার সরকারবিরোধী আন্দোলনের কথা থাকলেও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি এবং গত সোমবার ঢাকায় জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর এ হরতাল ডাকা হয়।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলে এটি বিএনপির ডাকা সপ্তম হরতাল।
সর্বশেষ গত ৬, ৭ ও ৮ জুলাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালসহ পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের দাবিতে সারাদেশে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি পালন করে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো।
২০০৯ সালের জানুয়ারিতে বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার দেড় বছর পর ২০১০ সালের ২৭ জুন প্রথম হরতাল ডেকেছিলো বিএনপি।
0 comments:
Post a Comment