SPORTS JOBS 7WONDERS

Ads by Cash-71

পদ্মা সেতুর অর্থায়ন স্থগিত দুর্নীতির অভিযোগ বিশ্বব্যাংকের তদন্ত করছে দুদক

Posted by methun

দুর্নীতির অভিযোগে স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন স্থগিত করল বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি জানিয়ে দিয়েছে, দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত এ প্রকল্পে তাদের অর্থায়ন স্থগিত থাকবে। তবে তা সাময়িক বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গতকাল পূর্বনির্ধারিত সংবাদ সম্মেলন বাতিল করে সাংবাদিকদের এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে সাময়িকভাবে তাদের অর্থায়ন বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছে। সংস্থাটির সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা এখনো চলছে। শীঘ্রই এ ব্যাপারে সমঝোতা হবে এবং গণমাধ্যমকে আনুষ্ঠানিক জানানো হবে।

বহুল প্রত্যাশিত এই পদ্মা সেতু নির্মাণে টেন্ডার-প্রক্রিয়ার পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের সমঝোতায় অর্থায়নকার প্রধান সংস্থা বিশ্বব্যাংকের কাছে অবশেষে হার হলো সরকারের। গতকাল তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে কানাডায় একটি অভিযোগ করা হয়েছে। আমাদের কাছেও একটি অভিযোগ করেছে। আমরা এটা তদন্ত করে দেখছি। দুর্নীতি দমন কমিশন ইতোমধ্যে অভিযোগটি তদন্ত শুরু করেছে। তবে পদ্মা সেতু ছাড়া বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত অন্যান্য প্রকল্প চলমান আছে। এর আগে অবশ্য রবিবার আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকেও তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর জন্য ১২০ কোটি ডলারের ঋণসহায়তা স্থগিত করেছে।

গতকাল অর্থমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে নদীশাসন, পরামর্শক নিয়োগ এবং প্রাক-যোগ্যতা যাচাই নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে বলে বিশ্বব্যাংক অভিযোগ করেছে। তারা আপাতত অর্থায়ন স্থগিত করেছে। তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুরো বিষয়টি নিয়ে সরকার তদন্ত করবে। এদিকে পরিকল্পনা কমিশনের একটি সূত্র বলছে, যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায়ও বিশ্বব্যাংক এতে আপত্তি জানিয়েছে। সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দুর্নীতিমুক্ত ও শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে না পারলে তারা অর্থায়ন স্থগিত রাখবে। যদিও যোগাযোগমন্ত্রী বারবার তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এর আগে টেন্ডার আহ্বানের পরার্শক নিয়োগের জটিলতা নিরসনে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার জন্য ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত ওয়াশিংটন সফর করেন অর্থমন্ত্রী। এরপর দেশে ফিরে পদ্মা সেতুর দুর্নীতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দীর্ঘ সময় বৈঠক করেন তিনি। ওয়াশিংটন সফরকালে তিনি বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পদ্মা সেতুর নির্মাণের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। ২৩ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভায়ও এ বিষয়ে জোরালো বক্তব্য রাখেন মুহিত। এ ছাড়া বিষয়টি নিয়ে অপর দাতা সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেটিভ এজেন্সি (জাইকা) ও ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। কিন্তু এর কোনো সুরাহা করতে পারেননি। বিশ্বব্যাংক বলেছে, দুর্র্নীতর অভিযোগ তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত এ প্রকল্পে তারা কোনো ধরনের অর্থায়ন করবে না। সূত্রমতে, পদ্মা সেতুর জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের আগমুহূর্তে বাছাই করা ছয়টি কোম্পানিকে বিশ্বব্যাংক কালো তালিকাভুক্ত করে। কোম্পানিগুলো হলো যুক্তরাজ্যভিত্তিক হাই পয়েন্ট রেন্টাল (এইচপিআর), একই দেশের হ্যালকো, কানাডিয়ান কোম্পানি এসএনসি লাভালিন, মনসেল এইকম এবং জাপানি একটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে এসএনসি লাভালিনের ব্যাপারে দুর্নীতির অভিযোগ তোলে বিশ্বব্যাংক। পরে কানাডার কোম্পানিটির কার্যালয়ে কানাডিয়ান পুলিশও অভিযান চালায়। ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে সফরকালে বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসাবেল এম গেরেরো অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সচিবালয়ে প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। এরপর তিনি সেদিনই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে দেখা করেন। সে সময় যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও এসএনসি লাভালিনের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন ইসাবেল। সূতমতে, ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। অর্থায়নের জন্য ২৮ এপ্রিল বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সঙ্গে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করে, যা মোট ব্যয়ের প্রায় ৫২ শতাংশ। প্রয়োজনে আরও ৩০ কোটি ডলার দেওয়ারও অঙ্গীকার করে বিশ্বব্যাংক। চুক্তির সময় সরকারকে সেতু নির্মাণে শতভাগ স্বচ্ছতা ও বিশ্বব্যাংকের প্রকিউরমেন্ট গাইডলাইন অনুসরণ করার জন্য কঠোর হুঁশিয়ারি দেয় সংস্থাটি। এমনকি তদারকির জন্য তৃতীয় পক্ষকে নিয়ে একটি কমিটিও করতে বলে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংক ছাড়াও পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে এডিবি ৬১ কোটি ৫০ লাখ ডলার, জাপান ৪০ কোটি ডলার, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা আইডিবি ১৪ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার চুক্তি করেছে। প্রকল্প ব্যয়ের বাকি অর্থ বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করার কথা।




0 comments:

Post a Comment