SPORTS JOBS 7WONDERS

Ads by Cash-71

স্বাস্থ্যসেবা সাধ্যে আনা বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ: হাসিনা

Posted by methun

স্বাস্থ্যসেবা সবার জন্য অবারিত করতে ও সাধ্যের মধ্যে আনতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উৎসের সম্পদ কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের সাধ্যের মধ্যে নিয়ে আসাকে একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে বর্ণনা করে বার্লিনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলন ২০১১ এর মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্যে রোববার বার্লিনের স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

"স্বাস্থ্যখাতে অর্থায়ন এখন একটি বহুল বিতর্কের বিষয়" বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "আমাদের প্রয়োজন এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারি উৎসের বাইরের সম্পদের লাগসই ব্যবহার উৎসাহিত করতে হবে।"

তিনি বলেন, "বিশ্ব স্বাস্থ্য প্রতিবেদন ২০১০-এ এ খাতে অর্থায়নের নতুন নতুন উপায় ও স্বাস্থ্যবীমার বিষয়ে যথার্থই আলোচনা হয়েছে।"

পাশপাশি প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে স্মরণ করিয়ে দেন, "স¤প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে নানামুখী সংকটের ফলে বীমার প্রিমিয়ামের যে অভূতপূর্ব ঊর্ধ্বগতি দেখা গিয়েছে তাতে স্বাস্থ্যসেবায় অর্থায়ন ও এর স্থায়িত্ব নিয়ে গভীর পরীক্ষা-নিরিক্ষার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।"

বিশ্ব সম্মেলনে বক্তব্যের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটির প্রধানমন্ত্রী ড. আঙ্গেলা মের্কেলকে 'স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে বৈশ্বিক আলোচ্যসূচিতে নিয়ে আসায় তার অদম্য প্রচেষ্টার জন্য' অভিনন্দন জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, "যখন আমরা উদ্ভূত স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় নীতি নির্ধারণের প্রয়াস চালাচ্ছি তখন এ বছরের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য 'আজকের বিজ্ঞান আগামী দিনের এজেন্ডা' খুবই সময়োপযোগী ও যথাযথ।"

বার্লিনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে মূল বক্তা হিসেবে যোগ দিতে পাঁচ দিনের সফরে শনিবার জার্মানি পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ২৫ অক্টোবর জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেলের সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবেন তিনি। বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলন করবেন দুই নেতা।

প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে জার্মানির প্রস্তাব অনুসারে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অভিযোজন ও প্রশমণ এবং স্বাস্থ্যখাতে সহযোগিতা বিষয়ে দুটি যৌথ ঘোষণা আসতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীকে হোটেল অ্যাডলনে সংবর্ধনা দেয় জার্মান আওয়ামী লীগ।

'লক্ষ্য ডিজিটাল বাংলাদেশ'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, "আমাদের আপাত লক্ষ্য হচ্ছে একটি মধ্যম আয়ের ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা যেখানে দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও অসাম্য দূর হয়ে আইনের শাসন ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।"

"আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আমার 'ভিশন ২০২১' নীতিতেও এ বিষয়গুলো রয়েছে। ইতোমধ্যেই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও আমাদের আর্থ-সামাজিক সূচকের উন্নতি হওয়া শুরু করেছে।"

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী হচ্ছে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধেও সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, "আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।"

স্বাস্থ্য খাত সব সময়ই তার সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়- এ কথা জানিয়ে হাসিনা বলেন, "আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, একজন সুস্থ মা সুস্থ সন্তানের জন্ম দেন যার মাধ্যমে একটি সুস্থ জাতি গড়ে ওঠে।"

দারিদ্র্য নিরসন, নারী-পুরুষের সমতা, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনার মতো নীতি-নির্ধারণের সঙ্গেও সুস্বাস্থ্য অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত বলে বক্তব্যে বলেন প্রধানমন্ত্রী।

খাদ্য নিরাপত্তাকে স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "তাই খাদ্যে রাসায়নিক, জৈব দূষণ, এনজাইম, হরমোন ইত্যাদির অতিরিক্ত বা দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যবহার রোধে আমরা দ্রুত সনাক্তকরণ কৌশল অবলম্বন করছি।

"স্যানিটারি ল্যাট্রিন ব্যবহারে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি আমরা মানুষকে ব্যক্তিগতভাবে বিশুদ্ধ জীবন-যাপনে অভ্যস্ত করার উদ্দেশ্যে প্রচারাভিযান চালাচ্ছি।"

"এসব পদক্ষেপ ডায়রিয়ার মতো পানিবাহিত রোগে আক্রান্তের হার কমিয়ে আনতে পারে।", বলেন হাসিনা।

স্বাস্থ খাতে নানা উদ্যোগ

দেশে চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "এ উদ্যোগ রোগ নির্ণয়ের মানসম্পন্ন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সহায়তা করেছে। এতে বিশেষায়িত ও উন্নত চিকিৎসা সেবার সুযোগও বৃদ্ধি পেয়েছে।"

বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা জোরদার করতে প্রায় পাঁচ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বলে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের জানান হাসিনা।

তিনি বলেন, "এছাড়া সাধারণ মানুষকে চিকিৎসকের পরামর্শ পাওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ই-হেলথ পরামর্শের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।"

হাসিনা বলেন, জাতিসংঘ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার নির্দেশনার আলোকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট অধিকাংশ নীতি প্রণীত হয়েছে।

"স্বাস্থ্য নীতিগুলো বাস্তবায়নের সফলতায় গত বছর জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশ মিলেনিয়াম ডেভলপমেন্ট গোল ৪ পুরষ্কার পেয়েছে।"

স্থায়ী প্রতিষেধক, ভিটামিন এ টিকার ব্যবহারে শিশু মৃত্যুহার হ্রাস ও ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য ওই পুরষ্কার দেওয়া হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

কমিউনিটি স্বাস্থ্য ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ মাতৃমৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। অন্যদিকে কমে এসেছে জন্মহারও। ২০০৭ সালে যেখানে জন্মহার ছিল দুই দশমিক সাত, ২০১০ সালে তা দুই দশমিক ৪৭-এ নেমে এেেসছ।

স্বাস্থ্যসেবা খাতে তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহারের সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে নারী ও শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়নে জাতিসংঘের সাউথ সাউথ আইসিটি অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার কথাও তুলে ধরেন তিনি। গত মাসে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৬তম অধিবেশনে ওই পুরষ্কার গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নশীল অনেক দেশের মতো আমাদের দেশেও এখনো ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, কালা-জ্বর, ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণ, ভাইরাল হেপাটাইটিস, ডেঙ্গু, জলাতঙ্ক ও এইচআইভি/এইডসের মতো সংক্রামক ব্যধি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে।

"অসংক্রামক ব্যাধির ক্ষেত্রে ফুসফুসের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও ক্যান্সারের প্রকোপ বেড়েছে।"

সম্মেলনে বক্তব্যে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রসঙ্গটিও উত্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, "সারা বিশ্বে অটিজম ও নানা ধরনের মানসিক সমস্যা বাড়লেও বেশিরভাগ উন্নয়নশীল দেশে মানসিক সমস্যা চিহ্নিত করা ও তার চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। বিশেষত অটিজম ও মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত শিশুরা অবহেলার শিকার হয়।

"এজন্য আমার মেয়ে সায়মা হোসেনের (একজন প্রশিক্ষিত সাইকোলজিস্ট) সহায়তায় আমরা অটিজম বিষয়ে ঢাকায় গত ২৫-২৯ জুলাই একটি আঞ্চলিক সম্মেলনের আয়োজন করেছিলাম।"

0 comments:

Post a Comment