SPORTS JOBS 7WONDERS

Ads by Cash-71

ক্যামেরাযোদ্ধা রশীদ তালুকদারের জীবনাবসান

Posted by methun

ঊণসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে রাজপথে একটি শিশুর মুষ্টিবদ্ধ হাতের যে ছবি বাঙালির স্বাধিকারের দাবিকে মূর্ত করে তুলেছিল- সেই ছবির আলোকচিত্রী রশীদ তালুকদার আর নেই।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় এই মুক্তিযোদ্ধার।

তার চাচাতো ভাই শেখ মোহাম্মদ সুমন  জানান, স্ট্রোক করার পর গত বুধবার বিকেল থেকে স্কয়ার হাসপাতালে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল রশীদকে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তা খুলে ফেলা হয়।

প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে গতবছর আর্ন্তজাতিক 'পাইওনিয়ার ফটোগ্রাফার অ্যাওয়ার্ড' পান রশীদ। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির একটি কর্মসূচির আওতায় প্রতিবছর বিশ্বের একজন সেরা ফটো সাংবাদিককে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।

কীর্তিমান এই আলোকচিত্রীর মেয়ে সোনিয়া রশীদ  জানান, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে গত ১১ সেপ্টেম্বর স্কায়ার হাসপাতালে তার অপারেশন হয়। এর কিছু দিন পর থেকে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন তিনি।

"অনেক সময় পরিবারের সদস্যদের চিনতে পারতেন না। অযথাই অনেককে বকাবকি করতেন।"

মেয়ে জানান, ১৪ অক্টোবর তার বাবাকে ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে বুধবার তাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

শেখ মোহাম্মদ জানান, শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী রশীদকে বুধবার জোহরের নামাজের পর আজিমপুর কবরস্থানে স্ত্রীর কবরের পাশে দাফন করা হবে।

তার লাশ মঙ্গলবার রাতে রাখা হবে স্কয়ার হাসপাতালের হিমঘরে। বুধবার বাসাবো এলাকায় তার জানাজা হবে।

রশীদ তালুকদার এক ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে গেছেন বলে জানান তার চাচাতো ভাই।

এই আলোকচিত্রী সাংবাদিক ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, অসহযোগ আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণসহ মুক্তিযুদ্ধের সময় অসংখ্য ছবি তোলেন যা, দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের সংগ্রামের কথা পৌঁছে দেয়।

পাইওনিয়ার ফটোগ্রফার অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী রশীদ তালুকদারের কাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ছবি। তিনি ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা শহরে গণহত্যার অসংখ্য ছবি ক্যামেরাবন্দি করেন। মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষণ শিবিরে ঘুরে ঘুরেও ছবি তোলেন তিনি।

১৯৩৯ সালের ২৪ অক্টোবর ভারতের চব্বিশ পরগনায় জন্মগ্রহণ করেন রশীদ তালুকদার। বাবার চাকরিসূত্রে ছয় বছর বয়সেই তিনি রাজশাহীর 'স্টার স্টুডিও'তে ছবি তোলার কাজ শুরু করেন।

১৯৬২ সালে দৈনিক সংবাদে আলোকচিত্রী হিসেবে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে তার প্রাতিষ্ঠানিক ফটো সাংবাদিকতার শুরু। সেখানে একযুগ কাজ করে ১৯৭৫ সালে যোগ দেন দৈনিক ইত্তেফাকে। সেখানে টানা ২৯ বছর কাজ করে তিনি অবসরে যান ২০০৭ সালে। এরপর থেকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেই তিনি সময় কাটাচ্ছিলেন।

বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রশীদ তালুকদার তার কর্মজীবনে জাপান ফটোগ্রাফিক সোসাইটি ও আশাহি সিমবুন থেকে সেরা আলোকচিত্রীর পুরস্কার, ইউনেস্কো, থাইল্যান্ড ও বিপিএস স্বর্ণপদকসহ দেশি-বিদেশি ৭৫টি পুরস্কার পেয়েছেন।

0 comments:

Post a Comment