বাজারের কলা, আম, পেঁপে, পেয়ারা, আনারস থেকে শুরু করে আপেল, আঙ্গুর, নাশপাতিসহ দেশি-বিদেশি প্রায় সব ফলেই মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত কেমিক্যাল। সাধারণত ফলমূলের উজ্জ্বল রঙ ক্রেতাদের নজর কাড়ে, সেগুলো বিক্রিও হয় বেশি দামে। তাই অপরিপক্ব ফল পাকাতে ক্যালসিয়াম কার্বাইড ও তা উজ্জ্বল বর্ণে রূপান্তরের জন্য অধিক ক্ষারজাতীয় টেক্সটাইল রঙ ব্যবহার হচ্ছে অবাধে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাছে থাকা পর্যায় থেকে বাজারে বিক্রির মুহূর্ত পর্যন্ত একেকটি ফলে ছয় দফা কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। মূলত গ্যাসজাতীয় ইথাইলিন ও হরমোন-জাতীয় ইথরিল অতিমাত্রায় স্প্রে এবং ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করার কারণেই ফলগুলো রীতিমতো বিষে পরিণত হয়। ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতেই ফলমূলে ক্ষতিকর কেমিক্যাল মেশানো হয়। অন্যদিকে ফলমূল দীর্ঘসময় ধরে সংরক্ষণ করতে ফরমালিনসহ আরও কিছু বিষাক্ত পদার্থেরও ব্যবহার চলে অহরহ।
রাসায়নিক উপাদান প্রয়োগ করে হাজার হাজার অপরিপক্ব কলা পাকাতে দেখা যায় তেজগাঁও রেলস্টেশনঘেঁষা কলার বাজারে। পুরোপুরি কাঁচা কলার কাঁদিগুলো ক্যালসিয়াম কার্বাইড-মিশ্রিত পানিভর্তি ড্রামে চুবিয়ে ওঠানো হচ্ছিল। এতে কলা উজ্জ্বল হলুদ বর্ণ ধারণ করে এবং পাকে দ্রুত। তেজগাঁও স্টেশনের কলার আড়তের পুরনো ব্যবসায়ী শামসুদ্দিন জোয়ার্দার বিষাক্ত ক্যালসিয়াম ব্যবহারের ব্যাপারে জানান, এক ড্রাম পানিতে পরিমাণমতো ক্যালসিয়াম কার্বাইড মেশানো হয়। এরপর ওই পানিতে আম, কলার কাঁদি, পেঁপে, লিচু, কুলসহ বিভিন্ন ফল চুবিয়ে তুলে নিলেই কাজ শেষ হয়ে যায়।
ইথাইলিন বা ক্যালসিয়াম কার্বাইড প্রয়োগের কারণে দুই-চার দিনের মধ্যেই ফল হলুদ রঙ ধারণ করে। বাস্তবে এসব ফল বাইরে থেকে পাকা মনে হলেও ভেতরের অংশে অপূর্ণতা থেকেই যায়। পরবর্তীতে সে ফলগুলো খাওয়ার কারণে মানবদেহে ছড়িয়ে পড়ে বিষাক্ত কেমিক্যাল। শুরু হয় নানা অসুখ-বিসুখ। অপরিপক্ব ফলমূলের স্বাদ-গন্ধ, ভিটামিনও অনেক কমে যায়।
কৃষিবিদ ড. আবদুল মান্নান বলেন, ফল ব্যবসায়ীরা সাধারণত যেসব নিম্নমানের কার্বাইড ব্যবহার করেন তা থেকে প্রচুর পরিমাণে আর্সেনিক তৈরি হয়। এ আর্সেনিক বা সেঁকো বিষই ফলের মধ্যে থেকে যায় এবং মানবদেহে প্রবেশ করে।
যাত্রাবাড়ী ফল আড়তের ছাপরা ঘরে স্তূপাকারে রাখা আনারসের ওপর ফরমালিন স্প্রে করতে দেখা যায় দুই কর্মচারীকে। কেমিক্যাল আর টেক্সটাইল রঙ জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর_ বলতেই রীতিমতো উত্তেজিত হয়ে ওঠেন যাত্রাবাড়ীর বিচিত্রা ফল আড়তের মালিক রাব্বানি মিয়া। তিনি ক্ষুব্ধ কণ্ঠেই বলেন, 'লাখ লাখ টাকা পুঁজি খাটিয়ে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আম, জাম, আনারস আনি। যত্ন-আত্তির অভাবে এসব ফল পচে নষ্ট হলে আমার ক্ষতিপূরণটা কেডায় দিব?'
এ আড়তে বসেই আনারসের পাইকার মধুপুরের সিরাজউদ্দিন জানান, স্বাভাবিক তাপমাত্রায় একটি আনারস ১০-১২ দিনের বেশি সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না। পচে গলে তা দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। এ ক্ষেত্রে ৫০০ পিপিএম এনএনএ বা ১০০ পিপিএম জিএ-৩ প্রয়োগের মাধ্যমে ওই আনারসই ৪০-৪৫ দিন পর্যন্ত অনায়াসে সংরক্ষণ করা যায়। সিরাজউদ্দিন বলেন, '১০০ টাকার কেমিক্যাল ছিটিয়ে পাঁচ হাজার আনারস যদি টিকিয়ে রাখা যায়, তাতে দোষের তো কিছু দেখি না।'
ফল পাকাতে যে বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় তার নাম কার্বাইড। দামে অতি সস্তা ও সহজলভ্য হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ফল পাকানোর কাজে কার্বাইডের যথেচ্ছ ব্যবহার করেন। কারওয়ান বাজারের বড় কলার আড়ত মেসার্স উজ্জ্বল এজেন্সির মালিক জোনাব আলী বলেন, 'আমার আড়তে ফল পাকানো বা সংরক্ষণের জন্য কোনো ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার হয় না। তবে আশপাশের সবাইকে ব্যাপকভাবে ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করতে দেখি।' তিনি জানান, এক কেজি ক্যালসিয়াম কার্বাইডের মূল্য ৬০-৭০ টাকা, যা দিয়ে ১০ টন ফল পাকানো সম্ভব। বড়জোর ১০০ গ্রাম কেমিক্যাল পানিতে মিশিয়ে ৫০ কেজি ফলমূল পাকানো যায়। এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ জানান, নানা রাসায়নিক পদার্থযুক্ত বিষময় ফল ধীরে ধীরে মানুষের লিভার ও কিডনি অকেজো করে দেয়। হার্ট দুর্বল করে দেয়। ব্রেন ন্যুব্জ হয়ে স্মৃতিশক্তিও কমে যায়। অস্বাভাবিকভাবে এসিডিটি বাড়ায়। তিনি বলেন, 'ফরমালিনযুক্ত খাদ্য নিয়মিত গ্রহণের ফলে পাকস্থলী, ফুসফুস ও শ্বাসনালিতে ক্যান্সার, এমনকি ব্লাড ক্যান্সারও হতে পারে।'
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাছে থাকা পর্যায় থেকে বাজারে বিক্রির মুহূর্ত পর্যন্ত একেকটি ফলে ছয় দফা কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। মূলত গ্যাসজাতীয় ইথাইলিন ও হরমোন-জাতীয় ইথরিল অতিমাত্রায় স্প্রে এবং ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করার কারণেই ফলগুলো রীতিমতো বিষে পরিণত হয়। ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতেই ফলমূলে ক্ষতিকর কেমিক্যাল মেশানো হয়। অন্যদিকে ফলমূল দীর্ঘসময় ধরে সংরক্ষণ করতে ফরমালিনসহ আরও কিছু বিষাক্ত পদার্থেরও ব্যবহার চলে অহরহ।
রাসায়নিক উপাদান প্রয়োগ করে হাজার হাজার অপরিপক্ব কলা পাকাতে দেখা যায় তেজগাঁও রেলস্টেশনঘেঁষা কলার বাজারে। পুরোপুরি কাঁচা কলার কাঁদিগুলো ক্যালসিয়াম কার্বাইড-মিশ্রিত পানিভর্তি ড্রামে চুবিয়ে ওঠানো হচ্ছিল। এতে কলা উজ্জ্বল হলুদ বর্ণ ধারণ করে এবং পাকে দ্রুত। তেজগাঁও স্টেশনের কলার আড়তের পুরনো ব্যবসায়ী শামসুদ্দিন জোয়ার্দার বিষাক্ত ক্যালসিয়াম ব্যবহারের ব্যাপারে জানান, এক ড্রাম পানিতে পরিমাণমতো ক্যালসিয়াম কার্বাইড মেশানো হয়। এরপর ওই পানিতে আম, কলার কাঁদি, পেঁপে, লিচু, কুলসহ বিভিন্ন ফল চুবিয়ে তুলে নিলেই কাজ শেষ হয়ে যায়।
ইথাইলিন বা ক্যালসিয়াম কার্বাইড প্রয়োগের কারণে দুই-চার দিনের মধ্যেই ফল হলুদ রঙ ধারণ করে। বাস্তবে এসব ফল বাইরে থেকে পাকা মনে হলেও ভেতরের অংশে অপূর্ণতা থেকেই যায়। পরবর্তীতে সে ফলগুলো খাওয়ার কারণে মানবদেহে ছড়িয়ে পড়ে বিষাক্ত কেমিক্যাল। শুরু হয় নানা অসুখ-বিসুখ। অপরিপক্ব ফলমূলের স্বাদ-গন্ধ, ভিটামিনও অনেক কমে যায়।
কৃষিবিদ ড. আবদুল মান্নান বলেন, ফল ব্যবসায়ীরা সাধারণত যেসব নিম্নমানের কার্বাইড ব্যবহার করেন তা থেকে প্রচুর পরিমাণে আর্সেনিক তৈরি হয়। এ আর্সেনিক বা সেঁকো বিষই ফলের মধ্যে থেকে যায় এবং মানবদেহে প্রবেশ করে।
যাত্রাবাড়ী ফল আড়তের ছাপরা ঘরে স্তূপাকারে রাখা আনারসের ওপর ফরমালিন স্প্রে করতে দেখা যায় দুই কর্মচারীকে। কেমিক্যাল আর টেক্সটাইল রঙ জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর_ বলতেই রীতিমতো উত্তেজিত হয়ে ওঠেন যাত্রাবাড়ীর বিচিত্রা ফল আড়তের মালিক রাব্বানি মিয়া। তিনি ক্ষুব্ধ কণ্ঠেই বলেন, 'লাখ লাখ টাকা পুঁজি খাটিয়ে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আম, জাম, আনারস আনি। যত্ন-আত্তির অভাবে এসব ফল পচে নষ্ট হলে আমার ক্ষতিপূরণটা কেডায় দিব?'
এ আড়তে বসেই আনারসের পাইকার মধুপুরের সিরাজউদ্দিন জানান, স্বাভাবিক তাপমাত্রায় একটি আনারস ১০-১২ দিনের বেশি সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না। পচে গলে তা দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। এ ক্ষেত্রে ৫০০ পিপিএম এনএনএ বা ১০০ পিপিএম জিএ-৩ প্রয়োগের মাধ্যমে ওই আনারসই ৪০-৪৫ দিন পর্যন্ত অনায়াসে সংরক্ষণ করা যায়। সিরাজউদ্দিন বলেন, '১০০ টাকার কেমিক্যাল ছিটিয়ে পাঁচ হাজার আনারস যদি টিকিয়ে রাখা যায়, তাতে দোষের তো কিছু দেখি না।'
ফল পাকাতে যে বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় তার নাম কার্বাইড। দামে অতি সস্তা ও সহজলভ্য হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ফল পাকানোর কাজে কার্বাইডের যথেচ্ছ ব্যবহার করেন। কারওয়ান বাজারের বড় কলার আড়ত মেসার্স উজ্জ্বল এজেন্সির মালিক জোনাব আলী বলেন, 'আমার আড়তে ফল পাকানো বা সংরক্ষণের জন্য কোনো ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার হয় না। তবে আশপাশের সবাইকে ব্যাপকভাবে ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করতে দেখি।' তিনি জানান, এক কেজি ক্যালসিয়াম কার্বাইডের মূল্য ৬০-৭০ টাকা, যা দিয়ে ১০ টন ফল পাকানো সম্ভব। বড়জোর ১০০ গ্রাম কেমিক্যাল পানিতে মিশিয়ে ৫০ কেজি ফলমূল পাকানো যায়। এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ জানান, নানা রাসায়নিক পদার্থযুক্ত বিষময় ফল ধীরে ধীরে মানুষের লিভার ও কিডনি অকেজো করে দেয়। হার্ট দুর্বল করে দেয়। ব্রেন ন্যুব্জ হয়ে স্মৃতিশক্তিও কমে যায়। অস্বাভাবিকভাবে এসিডিটি বাড়ায়। তিনি বলেন, 'ফরমালিনযুক্ত খাদ্য নিয়মিত গ্রহণের ফলে পাকস্থলী, ফুসফুস ও শ্বাসনালিতে ক্যান্সার, এমনকি ব্লাড ক্যান্সারও হতে পারে।'
0 comments:
Post a Comment